মেলান্দহে ২৪ ইটভাটার মধ্যে এক ইউনিয়নেই ১১ পৌরসভায় ৪টি ॥ বিপর্যয়ের মুখে কৃষি ও প্রকৃতি
মো. শাহ্ জামাল, জামালপুর সংবাদদাতা: জামালপুরের মেলান্দহে গড়ে ওঠেছে ২৪ টি ইটভাটা। এর মধ্যে পৌরসভায় হাসপাতাল ও সরকারি কলেজ-মৎস্য খামার সংলগ্ন ১টি, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ১টি, জালালপুর প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন ১টি এবং ফুলছেন্না কৃষি-বসতি জমিতে ১টিসহ ৪টি ইটভাটা গড়ে ওঠেছে।
এ ছাড়াও নয়ানগর ইউনিয়নেই ১১টি ইটভাটা গড়েওঠেছে। বুরুঙ্গাতে কমিউনিটি ক্লিনিকের চার দিকে ঘিরে রেখেছে ৪টি ইটভাটা। একই ইউনিয়নের মেঘারবাড়িতে ২টি, বজরদ্দিপাড়ায় ৪টি এবং মালঞ্চ কাচারীপাড়ায় ১টিসহ ১১টি ইটভাটা গড়ে ওঠেছে।
উপজেলার মহিরামকুলে পল্লীউন্নয়ন একাডেমীর পাশে ১টি, দেবেরছড়াতে ১টি, মাহমুদপুরে ১টি, চারাইলদারে ১টি, দুরমুঠ হাতিজায় ১টি, ফুলকোচা ইউনিয়নে ১টি এবং টুপকারচরে ২টিসহ সর্বমোট ২৪টি ইটভাটা গড়েওঠেছে। একই এলাকায় ফসলি জমি-বসতি-সদর রাস্তার পাশে-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-হাসপাতাল-কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশেই গড়ে ওঠেছে ইটভাটাগুলো।
এ সব ইটভাটার দুষণে কৃষি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এসব এলাকায় ফসলাদিসহ গাছের ফলনও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। শ^াসকষ্ট জনিত রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা। ইটভাটার মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃষককে ফাঁদে ফেলে আগে ফসলি জমির টপ সয়েল উজাড় করতো। এখন উচু জমিকে জলাশয়ে পরিণত করছে।
একদিকে ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী, অপরদিকে স্থানীয় প্রশাসনসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কৃষি ও পরিবেশের আইন লঙ্গন করে যত্রতত্র ইট পোড়ানো হচ্ছে। কোন কোন সময় প্রভাবশালীদের রাজনৈতিক চাপেও প্রশাসন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কৃষিবিদ ও সচেতন মহল মনে করছেন, ইটভাটায় এভাবে মাটি সাবাড় হতে থাকলে আবাদযোগ্য ১০ শতাংশ জমিও থাকবে না। এতে পরিবেশ বিপর্যয় ও খাদ্য সংকটের আশংকা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই যত্রতত্র বসতবাড়ি-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-হাসপাতাল-সদর রাস্তার পাশে এবং কৃষি জমি বিনষ্ট করে ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে একজন ইটভাটার মালিককে শোকজ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইনভাইরনমেন্ট ল-এসোসিয়েশন অব সুপ্রীম কোর্ট (বেলা)।
১০ অক্টোবর বেলার পক্ষে সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট সাঈদ আহমেদ কবির স্বাক্ষরিত শোকজ প্রেরণ করেন। যার স্মারক নং-এলএন/ইট/জামালপুর/২০১৮-৭২। ভূমি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জামালপুরের ডিসি-এসপি, ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, মেলান্দহ উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, কৃষি অফিসার, সহকারি কমিশনার (ভূমি), অফিসার ইনচার্জ এবং ইটভাটার মালিক মোতালেব খানকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যপারে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামিম আল ইয়ামীন বেলার প্রেরিত শোকজ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন-২৩ মে/১৮ জেলা প্রশাসন ইটভাটার স্থাপনের বিষয়ে তদন্ত করেছেন। ১২ জুলাই একটি ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও ১৬ অক্টোবর মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী এবং জালালপুর স্কুলের সংলগ্ন ইটভাটাসহ অভিযুক্ত মোতালেব খানের ইটভাটা নির্মাণের কার্যক্রম স্থগিত করতে বলা হয়েছে। বাকি ২০টি ইটভাটার স্থাপনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না? এমন প্রশ্নে ইউএনও সদুত্তর দেন নি।
⇘সংবাদদাতা: মো. শাহ্ জামাল
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।