সেবা ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের নির্ধারিত কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না বিএনপি-জামায়াত জোট। কোন কারণে নির্বাচনে বিএনপির এমন অকল্পনীয় এবং অভাবনীয় পরাজয় ঘটলো- সেটির কোন কূলকিনারা করতে পারছেন না খোদ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য যতটুকু করণীয় তার চেয়েও বেশি কাজ করেও জনরায়ে প্রত্যাখ্যাত বিএনপি জোট খাদের কিনারায় অবস্থান করছে বলেও মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। এদিকে সঠিক কোন কারণে দেশবাসী বিএনপি জোটের তরফ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো সেটি স্পষ্ট করতে পারেননি রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
অধ্যাপক এ আরাফাত বিএনপির এমন হতাশাজনক পরাজয়ের জন্য কিছু কারণ নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছেন। পাঠক, এ আরাফাতের বিশ্লেষণে জেনে নেয়া যাক বিএনপির লজ্জাজনক পরাজয়ের কিছু কারণ..
এ আরাফাতের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জনপ্রিয় এবং পরীক্ষিত নেতাদের উপেক্ষা করে শুধুমাত্র অর্থের দিকে তাকিয়ে তুলনামূলক অজনপ্রিয় এবং অখ্যাত নেতাদের মনোনয়ন দিয়ে প্রথম ও চূড়ান্ত ভুল করে। তিনি মনে করেন, বিভাগীয় শহরগুলোর আসনে অন্তত পরিচিত এবং বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের মনোনয়ন দিলে এরকম ভরাডুবি হতো না। সেক্ষেত্রে অর্থকেন্দ্রিক রাজনীতি বিএনপির অস্তিত্বের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।
খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি এবং ফৌজদারি মামলার আসামিদের মনোনয়ন দিয়ে বিএনপি দ্বিতীয় বৃহত্তম ভুলটি করে বসে। সাধারণ মানুষ বিগত বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে এসব নেতাদের ভয়ঙ্কর সব কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছিলো। তাই নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং দেশের উন্নয়ন বিবেচনায় এসব কুখ্যাত এবং দাগি আসামিদের প্রত্যাখ্যান করায় বিএনপিকে নির্বাচনে চরম লজ্জায় পড়তে হয়েছে। সেই অর্থে বিএনপির রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজের নেতার সংকট পরাজয়কে তরান্বিত করেছে।
বিগত দশ বছরে বিএনপি সরকারবিরোধী কোন আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলন, নাগরিক আন্দোলনে মাঠে নেমে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় দিতে ক্রমাগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে। একটা দল বিরোধী দলের থেকেও দলীয় কোন্দল এবং বিভিন্ন কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেয়াটা বন্ধ করতে না পারায় চূড়ান্ত পরীক্ষায় দলের মহাবিপর্যয় ঘটে। বিভিন্ন সময়ে কমিটি দেয়া, বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান দেয়া নিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে বিএনপির অন্তঃকোন্দল স্পষ্ট হয়েছে অতীতে। মহাসচিব সম্প্রতি দলীয় শৃঙ্খলার জন্য নিজের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বিএনপির চূড়ান্ত পতনের বিষয়েও আভাস দিয়েছেন। এছাড়া সিনিয়র নেতারা মাঠ পর্যায়ে একেকজন একেক বার্তা দিয়েছেন। দলের নেতৃত্ব ছিলো বিভক্ত। ফলে তারা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।
নির্বাচনের শুরুতেই নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল কবির রিজভী, হাবিবুন্নবী খান সোহেল, মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মতো নেতারা। এতে কর্মীরা শুরু থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখে। ঐক্যফ্রন্টের উপর ভরসা করে বিএনপি নিজস্ব স্বকীয়তা হারায়। আওয়ামী লীগ-ঘেঁষা ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের শুরু থেকেই বিশ্বাস করতে পারেনি বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা। মূল সমস্যাটা ছিলো, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন দলের নেতাদের। তাদের নিজেদের মধ্যে কোনরকম সমন্বয় ছিলো না। মূলত অবিশ্বাসের জায়গা থেকেই তারা সাধারণ ভোটারদের বিএনপির প্রার্থীদের ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে টেনে আনতে ব্যর্থ হন। ব্যর্থতার জন্য বিএনপি অবশ্য ড. কামাল গংকে সরাসরি দোষারোপ করতে পারে। এছাড়াও বিএনপির প্রার্থীদের অর্থব্যয়ে গড়িমসি, কর্মীদের উৎসাহিত করার ঘাটতির কথাও উঠে এসেছে পরাজয়ের খসড়া দলিলে।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।