ডিটেকটিভ কাহিনী: প্রমীলা গোয়েন্দা

S M Ashraful Azom
0
ডিটেকটিভ কাহিনী প্রমীলা গোয়েন্দা
সেবা ডেস্ক: গোয়েন্দা বা ডিটেকটিভ বললেই আমরা পুরুষদের কথাই আগে ভাবি। যেমন শার্লক হোমস বা ফেলুদা—সবাই তো পুরুষ গোয়েন্দা। কিন্তু নারী তথা প্রমীলা গোয়েন্দা কি নেই? তাই প্রমীলা গোয়েন্দাদের খোঁজখবর নিয়ে আজকের এই লেখা।

কথা সাহিত্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আর কৌতূহলোদ্দীপক চরিত্র হলো ডিটেকটিভ তথা গোয়েন্দারা। পাঠক এসব চরিত্রের মধ্যে নিজেকে প্রোথিত করতে ভালোবাসে, রোমাঞ্চিত বোধ করে। এই ধারার জন্ম উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। কিছু তর্ক আর দ্বিমত থাকলেও মোটামুটিভাবে সবাই মেনে নেয়, মার্কিন সাহিত্যিক এডগার অ্যালান পোই হচ্ছেন এই ধারার স্রষ্টা।

১৮৪১ সালে প্রকাশিত তাঁর দ্য মার্ডার ইন দ্য রু মর্গ উপন্যাসের গোয়েন্দা চরিত্র অগাস্ত দ্যুপেঁই প্রথম সার্থক গোয়েন্দা চরিত্র। যদিও পোর লেখায় ‘ডিটেকটিভ’ শব্দটির উল্লেখই ছিল না। তারপরও পরবর্তীকালে এ ধরনের যুক্তিবাদী গোয়েন্দা চরিত্রগুলোকে ডিটেকটিভ হিসেবেই অভিহিত করা শুরু হয়। দ্যুপেঁকে অনুসরণ করে একঝাঁক গোয়েন্দার আবির্ভাব ঘটে ইউরোপ-আমেরিকায়। তবে চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এসব বুদ্ধিমান গোয়েন্দারা সবাই পুরুষ।

বিশ্বের গোয়েন্দা কাহিনির ইতিহাস ঘাঁটলেও দেখা যাবে, ইংল্যান্ডের শার্লক হোমস থেকে চিনের ডি রেঞ্জি—সবাই পুরুষ। এমনকি তাদের সহকারী হিসেবেও কোনো নারীর দেখা পাওয়া যায় না। শুরুর দিকে গোয়েন্দা কাহিনিতে নারীরা হতো ভিকটিম। পুরুষের মতো সাহস আর মগজ খাটিয়ে রহস্যের সমাধান করতে দেখা যেত না তাদেরকে।

প্রথম প্রমীলা তথা নারী গোয়েন্দা চরিত্র কোনটি, তা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। এর তত্ত্ব-তালাশ করতে গেলে গোয়েন্দাদের আদিপিতার আসনটিই নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। অ্যালান পো দ্য মার্ডার ইন দ্য রু মর্গ প্রকাশ করেন ১৮৪১ সালে, কিন্তু তারও কয়েক মাস আগে ক্যাথরিন ক্রো নামের এক লেখিকা প্রকাশ করেন দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অব সুজান হপ্লি, অর সার্কামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স। তাহলে কি ক্যাথরিন ক্রো কেবল প্রথম নারী গোয়েন্দা চরিত্রেরই স্রষ্টা নন, বরং প্রথম গোয়েন্দা কাহিনিরও রচয়িতা?

ক্রোর প্রধান চরিত্র সুজান হপ্লি একজন গৃহপরিচারিকা। বহু ভয়ংকর আর আধিভৌতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে শেষে সাহসিকতার সঙ্গেই সব সমস্যার সমাধান করে প্রেমিককে কাছে পায় সে। এ জন্য ক্রোর উপন্যাসকে গোয়েন্দা কাহিনি হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে বরং রোমাঞ্চকর প্রেমের উপাখ্যান বলা হয়। সমালোচকদের মতে, গোয়েন্দা কাহিনির অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে এক বা একাধিক তদন্ত কিংবা অনুসন্ধান, ক্রোর গল্পে যা অনুপস্থিত। গল্পের নায়িকা কোনো যুক্তিবুদ্ধি ব্যবহার করে সমাধানে পৌঁছায়নি বলে একে ডিটেকটিভ কাহিনি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়ে গেছেন অ্যালান পো!

পোর প্রায় দুই দশক পর, ১৮৬৪ সালে ইংল্যান্ডে দু–দুটো নারী গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে বই প্রকাশিত হয়: অ্যান্ড্রু ফরেস্টার জুনিয়রের দ্য ফিমেল ডিটেকটিভ ও ডব্লিউ এস হেওয়ার্ডের রিভিলেশনস অব আ লেডি ডিটেকটিভ। সস্তা কাগজ আর স্থূল প্রচ্ছদের এসব বই ইংল্যান্ডের রেলস্টেশনগুলোতে বিক্রি হতো বেশ কম দামে। ভ্রমণের সময়টা এসব বই পড়ে অতিবাহিত করতেন অনেকে। এর সঙ্গে আমাদের অঞ্চলের বটতলার সাহিত্যের বেশ মিল আছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই দুই নারী গোয়েন্দার আবির্ভাবের প্রায় দুই দশক পর বেকার স্ট্রিটের বিখ্যাত চরিত্রটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।

দ্য ফিমেল ডিটেকটিভ ও রিভিলেশনস অব আ লেডি ডিটেকটিভ উপন্যাস দুটির প্রধান চরিত্র নারী হলেও লেখক কিন্তু পুরুষ। দ্য ফিমেল ডিটেকটিভ–এর নায়িকা মিসেস গ্ল্যাডেন দারুণ কর্মতৎপর, সবকিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সে, তথ্য বিশ্লেষণে প্রয়োগ করে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। জুতার ছাপ বিশ্লেষণ করে তার অপরাধী শনাক্ত করার বিষয়টি শার্লক হোমসের অনুসন্ধান পদ্ধতির মধ্যেও দেখা যায়। দ্যুপেঁ ও হোমসের মতো গ্ল্যাডেনও পুলিশ বাহিনীকে অযোগ্য আর অকর্মণ্য মনে করে।

রিভিলেশনস অব আ লেডি ডিটেকটিভ-এর নায়িকা চল্লিশোর্ধ্ব এক বিধবা মিসেস পাশেল। ভদ্রমহিলা লন্ডন পুলিশের প্রধান কর্নেল ওয়ার্নারের অধীনে কাজ করে। তার দশটি কেসের সফল সমাধান নিয়েই গল্পগুলো লেখা হয়েছে। এই কেসগুলোর মধ্যে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ, পরকীয়া, জালিয়াতি—সবই আছে। পাশেল কোল্ট রিভলভার রাখে সব সময় আর সেটা ব্যবহার করতে মোটেও দ্বিধা করে না। সন্দেহভাজনকে অনুসরণ করে, লুকিয়ে অন্যের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালায় সে। এমনকি সন্দেহভাজনকে ধরার জন্য প্রয়োজনে সেই আমলের নারীদের ঘাঘরাজাতীয় পোশাকের নীচের অংশটি খুলে ফেলতেও দ্বিধা করে না। এ রকম নানা কারণে তৎকালীন সমাজের নারীদের তুলনায় গ্ল্যাডেন ও পাশেল একেবারেই আলাদা। তারা স্বাধীনচেতা, পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে সচেতন আর অবশ্যই সাহসী। পাশেল আবার এককাঠি ওপরে। সে মনে করে, নারী হওয়ার সুবাদে ডিটেকটিভের কাজে পুরুষের থেকে একটু বেশি সুবিধা পায় সে। নারী বলে তাকে সন্দেহ করে না কেউ, ফলে যেখানে–সেখানে অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারে, অনুসন্ধান করতে পারে। নারীদের সঙ্গে দ্রুত ভাব জমিয়ে পেট থেকে কথা বের করতে পারে। যা–ই হোক, দুর্বল লেখনীর কারণে চরিত্র দুটো পাঠক হৃদয়ে তেমন দাগ কাটতে পারেনি।

এরপর ১৮৮০ সালে ওল্ড স্লুথ ছদ্মনামে হার্লান পি হ্যালসি দ্য লেডি ডিটেকটিভ উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকের সামনে উপস্থিত করেন তেইশ বছরের সুন্দরী নারী গোয়েন্দা কেট গোলেটকে। নিউইয়র্কের এই মেয়ে বয়সে তরুণী হলেও সাহস, ধৈর্য আর বুদ্ধির দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ। নিজেকে রক্ষা করতে পুরুষের ওপর নির্ভর করে না, বরং পুরুষদেরকেও বিপদমুক্ত করার ক্ষমতা রাখে সে। এই গোয়েন্দা কাজের প্রয়োজনে নানা রকমের অস্ত্র উদ্ভাবন করে। অনেক পরে লেখা এবং প্রকাশিত হওয়া ইয়ান ফ্লেমিংয়ের জনপ্রিয় চরিত্র জেমস বন্ড অনেকটাই কেট গোলেটের আদলে লেখা।

১৮৯৫ সালে ক্যাড মেটি নামে আরেকটি নারী গোয়েন্দার চরিত্র হাজির করেন হ্যালসি। তাঁর এই প্রমীলা গোয়েন্দা যেমন সাহসী, তেমনি চালাক। ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারঙ্গম। ডুডি ডান নামে তার এক পুরুষ সহযোগী রয়েছে। তারা একে অন্যকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। ১৯০৪ সালে হ্যালসি মাদমোয়াজেল লুসি: দ্য ফ্রেঞ্চ লেডি ডিটেকটিভ উপন্যাসে লুসি নামে আরেক নারী গোয়েন্দার জন্ম দেন। জেরি ম্যাক নামে তারও একজন পুরুষ সহকারী আছে, লুসি তাকে নিয়ে বিভিন্ন অপরাধ আর রহস্যের সমাধান করে।

তখনো নারী গোয়েন্দারা নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হলেও সচরাচর মারামারিতে লিপ্ত হতো না, বুদ্ধিই ছিল তাদের প্রধান অস্ত্র। তবে ১৮৮৯ সালে দ্য অ্যাকট্রেস ডিটেকটিভ অর দ্য ইনভিজিবল হ্যান্ড: দ্য রোম্যান্স অব অ্যান ইমপ্লাকেবল মিশন উপন্যাসে অ্যালবার্ট ডব্লিউ অ্যাকন তাঁর নায়িকা হিল্ডা সিরিনকে একেবারে অন্যভাবে হাজির করলেন। পঁচিশ বছর বয়সী এই মেয়ে বক্সিংয়ে পারদর্শী, অস্ত্র ব্যবহারে দক্ষ, ছুরিও চালাতে পারে। নিউইয়র্ক পুলিশ যেসব অপরাধীকে ধরার সাহস করে না, হিল্ডা তাদের মোকাবিলা করে। আশির দশকের জনপ্রিয় টিভি শো চার্লিস অ্যাঞ্জেলস-এর তিন নারীকে আসলে এই হিল্ডার আদলে নির্মাণ করা হয়েছিল।

পাশ্চাত্যে প্রথম যুগের নারী গোয়েন্দাদের জন্ম দিয়েছিলেন পুরুষ লেখকেরা। তাদের অনুসন্ধানের ধরনও ছিল পুরুষদের মতোই। তবে বেশির ভাগ নারী গোয়েন্দার কাজের পরিসর প্রেমিক, স্বামী, দাম্পত্যজীবন, সন্তান আর পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। এসব নারী গোয়েন্দারা প্রায় সবাই ছিল অপেশাদার। ১৮৫৬ সালে উইকি কলিন্সের দ্য ডায়রি অব অ্যান রডওয়ে উপন্যাসের নায়িকা অ্যান রডওয়ে যাবতীয় প্রমাণ সংগ্রহ করে একাই হত্যারহস্যের জট খুলে ফেলে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী গোয়েন্দা নিয়ে গল্প লেখেন হ্যারি রকউড। তাঁর ক্লারিস ডাইক দ্য ফিমেল ডিটেকটিভ প্রকাশিত হয় ১৮৮৩ সালে। এই ক্লারিস একজন পুলিশ ডিটেকটিভের স্ত্রী। নিজের স্বামীকে বিভিন্ন কেসে সাহায্য করে সে। প্রথম নারী লেখকের হাতে নারী গোয়েন্দার জন্মও হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেই। ১৮৯৭ সালে অ্যানা ক্যাথরিন গ্রিনের লেখা দ্য অ্যাফেয়ার নেক্সট ডোর উপন্যাসে মিস অ্যামেলিয়া বাটারওয়ার্থ তার ক্ষুরধার বিশ্লেষণী ক্ষমতা দিয়ে পাঠককে মুগ্ধ করে। মিস বাটারওয়ার্থের কল্যাণেই গোয়েন্দা-সাহিত্যে বয়স্ক আর অবিবাহিত নারী গোয়েন্দা ধারাটির প্রচলন ঘটে, যা পরবর্তীকালে পূর্ণতা পায় আগাথা ক্রিস্টির মিস মার্পল ও প্যাট্রিশিয়া ওয়েন্টওয়ার্থের সৃষ্ট মিস মড সিলভার চরিত্রের মধ্য দিয়ে। এই মাঝবয়সী নারী গোয়েন্দাদের কোনো গ্ল্যামার নেই, আছে শুধু তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর পর্যবেক্ষণক্ষমতা।

১৮৯০ সালে পশ্চিমা বিশ্বে শুরু হয় নারীমুক্তি আন্দোলন। নারীরা উপার্জন করে স্বাধীন হবে, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, এমন চিন্তাভাবনার প্রভাব পড়ে গোয়েন্দা–সাহিত্যেও। এবার নারী গোয়েন্দারা পেশাদার। ১৯০০ সালে এম ম্যাকডোনেল বডকিনের ডোরা মার্ল দ্য লেডি ডিটেকটিভ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ডোরা উচ্চশিক্ষিত, সে অস্ত্র চালাতে জানে, ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশক্তি তার, রহস্যের সমাধানে পদ্ধতিগত জ্ঞান প্রয়োগ করে থাকে।

১৮৯৪ সালে সি এল পর্কিজের দ্য এক্সপেরিয়েন্সেস অব লাভডে ব্রুক, লেডি ডিটেকটিভ উপন্যাসের আরেক নারী গোয়েন্দা লাভডে ব্রুক স্বাধীনচেতা আর উচ্চশিক্ষিত। নারীদের জন্য নির্ধারিত পেশা শিশুপরিচর্যার চাকরি ছেড়ে দিয়ে গোয়েন্দার চাকরি নেয় সে। শার্লক হোমসের মতো সে-ও ছদ্মবেশ ধারণ করে দোষীকে ফাঁদে ফেলে, হোমসের মতোই পর্যবেক্ষণশক্তি প্রয়োগ করে অনুসন্ধান চালায়, সর্বোপরি হোমসের মতো তদন্তের কাজ না থাকলে মানসিক বিষাদেও আক্রান্ত হয়।

শার্লক হোমসের আদলে আরও কিছু নারী গোয়েন্দা চরিত্র গড়ে উঠেছিল সে সময়। এদের মধ্যে ১৯১৪ সালে হিউ সি উইয়ারের মিস ম্যাডেলিন ম্যাক ডিটেকটিভ-এর ম্যাডেলিন ম্যাক এবং ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত হেজেল ক্যাম্পবেলের ওলগা নেয়ার্সব্রুক ডিটেকটিভ-এর ওলগা নেয়ার্সব্রুক সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তবে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে পূর্ণাঙ্গ এবং স্বাধীন নারী গোয়েন্দা চরিত্র প্রথম দেখা যায় ১৯৪৭ সালে গেইল গ্যালাহার ছদ্মনামে লেখা আই ফাউন্ড হিম ডেড উপন্যাসে। আসল লেখকদ্বয় ছিলেন মার্গারেট স্কট এবং উইল আউরস্লার। উপন্যাসে গোয়েন্দা নায়িকার নামও গেইল গ্যালাহার।

নারী গোয়েন্দাদের স্বর্ণযুগ সম্ভবত সত্তরের দশককে বলা যেতে পারে। ১৯৭২ সালে ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হয় পি ডি জেমসের অ্যান আনসুইটেবল জব ফর আ উইম্যান উপন্যাসটি, এর মাধ্যমে তিনি পাঠকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন কর্ডেলিয়া গ্রেকে। প্রায় একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্শা মুলার লিখলেন এডউইন অব দ্য আয়রন শুজ উপন্যাসটি। তাঁর গোয়েন্দা চরিত্রটির নাম শ্যারন ম্যাকোন।
জনপ্রিয় অ্যালফাবেট সিরিজের রচয়িতা সু গ্রাফটন ১৯৮২ সালে এ ইজ ফর অ্যালিবাই উপন্যাসের মাধ্যমে
তাঁর গোয়েন্দা নায়িকা কিঞ্জি মিলহোনকে পাঠকের সামনে হাজির করেন।

আশির দশকের শেষের দিকে আমেরিকান টিভি সিরিজ মার্ডার শি রোট খুবই জনপ্রিয়তা পায়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র জেসিকা ফ্লেচার একজন মাঝবয়সী বিধবা লেখিকা, লেখালেখির পাশাপাশি তিনি আশপাশের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ আর রহস্যের তদন্ত করেন। অনেকটা ক্রিস্টির মিস মার্পলের আধুনিক সংস্করণ ছিল চরিত্রটি। টমাস হ্যারিসের দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস উপন্যাসের এফবিআই এজেন্ট ক্লারিস স্টার্লিং বয়সে তরুণী হলেও সফলভাবে একজন সিরিয়াল কিলারকে ধরতে পারে। মাত্র দুটো বইতে তার পদচারণা থাকলেও চরিত্রটি পাঠক এবং সিনেমার দর্শকের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

বর্তমান সময়কে বলা হয় ডিজিটাল যুগ। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মুঠোফোন, জিপিএস, সিসি ক্যামেরা—এসবের কারণে গোয়েন্দা সাহিত্যও অনেকটা বদলে গেছে, বদলে গেছে এর চরিত্রগুলো। ব্যতিক্রম নয় নারী গোয়েন্দারাও। সুইডিশ লেখক স্টিগ লারসনের জনপ্রিয় চরিত্র লিসবেথ সালান্ডার কম্পিউটার হ্যাকার হলেও গোয়েন্দাগিরি করে বেড়ায়। ২০০০ সালে শুরু হওয়া আমেরিকান টিভি সিরিজ সিএসআই–এ বাস্তবধর্মী ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটরদের একটি দলের দেখা মেলে, সেই দলে আছে একাধিক নারী সদস্য, তদন্তে যাদের ভূমিকা পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।

দক্ষিণ এশীয় লেখকদের অনেকেই ইংরেজি ভাষায় লিখে থাকেন, তারপরও তাঁদের সৃষ্ট দেশি গোয়েন্দার সংখ্যা খুব বেশি নয়, নারী গোয়েন্দার কথা না হয় বাদই দিলাম। খোঁজ করে পাওয়া গেল মাত্র তিনজনকে—কল্পনা স্বামীনাথনের গোয়েন্দা লাল্লি, মধুমিতা ভট্টাচার্য্যের রিমা রায় ও স্বাতী কৌশলের পুলিশ অফিসার নিকি মারওয়া।

পশ্চিমা বিশ্বে এখন নারী রহস্য-রোমাঞ্চ লেখকের সংখ্যা প্রচুর, আর তাঁদের অনেকেই সহজাতভাবে সৃষ্টি করে যাচ্ছেন নারী গোয়েন্দা চরিত্র। সেগুলো বেশ পাঠকপ্রিয়তাও পাচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস–এর বেস্ট সেলার তালিকায় চোখ বোলালেই এর সত্যতা মেলে। তবে বাংলা ভাষায় নারী গোয়েন্দার সংখ্যা হতাশাজনকভাবেই কম। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মিতিন মাসি এবং তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়েন্দা গার্গী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নারী গোয়েন্দার দেখা পাওয়া দুষ্কর। এর কারণ সম্ভবত গোয়েন্দা কাহিনি কিংবা জনরা ফিকশন এখানে শুরু থেকেই অনিয়মিতভাবে লেখা হয়েছে, আর যেগুলো লেখা হয়েছে সেগুলো পশ্চিমা লেখকদের গল্প অনুকরণে, নয়তো হুবহু।- প্রথম আলো

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top