ধনবাড়ীতে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

S M Ashraful Azom
0
Extensive irregularities and corruption in the purchase of paddy in Dhanbari
মধুপুর প্রতিনিধি:  টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আ. হাকিম ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মো. নজরুল ইসলামসহ গুদাম কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারি ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও উপজেলা খাদ্য বিভাগ ও গুদাম কর্মকর্তারা ধান ব্যবসায়ী, দালাল- ফড়িয়াদের সাথে যোগসাজস করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করেছেন।

জানা যায়, উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রথম দফায় ৩১৭ মেট্রিক টন এবং দ্বিতীয় দফায় ৫২৮ মেট্রিক টনসহ মোট ৮৪৫ মোট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে। কৃষকদের কাছ থেকে চিটা ও ময়লামুক্ত ১৪ ভাগ আদ্রতার ধান সংগ্রহ করে সংরক্ষণের বিধিবিধান থাকলেও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় তা মানা হয়নি।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে গত ৭ মে থেকে ধনবাড়ী উপজেলার  প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু হয়ে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত ক্রয় করার কথা।

খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী গত ৭ মে থেকে ১৮ আগষ্ট পর্যন্ত প্রকৃত কৃষকদের দফায়-দফায় হয়রানী করে যতসামান্য ধান ক্রয় করলেও গত ১৯ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্টের মধ্যে তড়িঘড়ি করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে রাতের আধাঁরে মোট ৮৪৫ মোট্রিক টন নি¤œ মানের ধান ক্রয় করে গুদামজাত করা হয়েছে। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি ও উপজেলা প্রশাসন খাদ্য গুদামে প্রভাবশালী চক্রকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি যাতে তালিকাভুক্ত প্রকৃত কৃষক ধান বিক্রি করতে পারে সে বিষয়ে তৎপর থাকলেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আ. হাকিম ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট সরব থাকায় সব উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

উপজেলার মুশুদ্দি কামারপাড়া গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান চাঁন মিয়া, বাঐজানানের সুরুজ্জামান, নরিল্লা গ্রামের কৃষক আ. মজিদ ঠাকুর, বলিভদ্র গ্রামের কৃষক মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমানসহ স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ধান ক্রয় অভিযান শুরু হলে স্থানীয় কৃষকরা ধান দেয়ার জন্য নমুনা নিয়ে উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের কাছে ধানের মান ও আদ্রতা পরীক্ষা করাতে গেলে ধানের মান ভালো না এমন অজুহাতে প্রকৃত কৃষকদের বারবার ফিরিয়ে দিয়ে হয়রানি করতে থাকে। অথচ সেই ধানই কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে  টন প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা উৎকোচের বিনিময়ে গুদামে সরবরাহ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল ফড়িয়ারা। ফলে কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে না পেরে ন্যায মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

উপজেলার কৃষকদের অভিযোগ, গুদামে ধান সংগ্রহে মান যাচাইয়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। অপরদিকে টাকার বিনিময়ে নি¤œ মানের ধান দিয়ে গুদাম ভর্তি করা হচ্ছে।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন খাদ্যগুদাম ঘুরে দেখা যায়, দালাল ফঁড়িয়াদের মাধ্যমে সরবরাহকৃত ধান যাচাই-বাছাই না করে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাক ডেটে গুদামজাত করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের পক্ষ থেকে ধান নিয়ে আসা হলে ওই ধান নিয়ে নানা রকম জটিলতা ও তালবাহানা করে কৃষকদের ধান পুনরায় রোদে শুকিয়ে নিয়ে আসার কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে।

মুশুদ্দি কামারপাড়া গ্রামের কৃষক  মো. আসাদুজ্জামান চাঁন মিয়া বলেন, বারবার রোদে শুকিয়ে ফ্যানের বাতাসে ধান ও চিটা পৃথক করে ৩০ মণ ধান নিয়ে গত তিন মাস যাবৎ খাদ্যগুদামে ঘুরতেছি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল সোমবার খাদ্যগুদামে এসে ঘুষ না দিতে পারায় ধান বিক্রি করতে পারি নাই।

খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে কৃষকদের আনিত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সরবারহকৃত কৃষকদের তালিকা মোতাবেক ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। গুদামে কোনো সিন্ডিকেট নেই। সরকারি বিধিমোতাবেকই ধান ক্রয় করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আ. হাকিম বলেন, এতো বড় প্রতিষ্ঠানে শতভাগ স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করা যায় না। কিছুটা ত্রæটি বিচ্চ্যুতি হতে পারে। আর কে কৃষক, কে ব্যবসায়ী এটাতো আমার জানার বিষয় না। কৃষি তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষকদের ধান ফেরত দিয়ে রাতের আধাঁরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সদোত্তর না দিয়ে বলেন বন্ধের দিন এবং রাতেও ধান কিনার বিধান রয়েছে। 

এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা সিদ্দিকার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেলায় গুরুতপূর্ণ মিটিংএ আছেন। তবে খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top