জামালপুর ডিসিকে ওএসডি ও নারীর পরিচয় প্রকাশ

S M Ashraful Azom
0
Jamalpur DC has revealed the identity of OSD and women
জামালপুর সংবাদদাতা : জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে ওএসডি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ এনামুল হককে নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে।

অপরদিকে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
নতুন ডিসির বাড়ি কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার শশীদল গ্রামে।

২৫ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব কেএম আল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরালের পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানানো হয়। ২৫ আগস্ট রবিবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার পরপর পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনের প্রাপ্তি স্বীকারের মাধ্যমে এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসকের সাথে আপত্তিকর ঘটনার সাথে জড়িত (বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা) ওই নারী অফিস সহায়কের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানান-এই ঘটনার পর থেকে অফিসকে অবহিত নাকরে অনুপস্থিত আছে। ওই নারীর বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিতর্কিত জেলা প্রশাসকের ওই খাস কমরাটিও তালাবদ্ধ রয়েছে। কোন মালামাল সরানো হয়নি ঘটনার পর থেকে ওই কক্ষে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

অপরদিকে জেলা প্রশাসকের এমন কর্মের বিষয়ে ২৫ আগস্ট রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেছে। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা) মুশফিকুর রহমানকে আহŸায়ক এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখার উপসচিবকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক জন প্রতিনিধি, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একজন প্রতিনিধি। সদস্যরা কেউ উপসচিব পদমর্যাদার নিচে হতে পারবেন না। তদন্ত কমিটি মাঠপর্যায়ে যাচাই বাছাই, ভিডিও পরিক্ষা নিরিক্ষার বিশেষজ্ঞদেরও সহায়তা নিতে পারবেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

২২ আগষ্ট মধ্যরাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির ও তার অফিস সহায়ক এক মহিলারর সাথে আপত্তিকর ভিডিওটি ভাইরাল হলে দেশজুড়ে ধিক্কার-ঘৃনার সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় জামালপুরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে তৈরি হয় বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ৩ আগস্ট জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে তার কার্যালয়ের এক নারী অফিস সহকারির সাথে অপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়। ২৩ আগস্ট দুপুরে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের জানান, “আমি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। আপনারা আমাকে একটু সময় দিবেন। প্রকৃত ঘটনা জানতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি সাজানো ভিডিও। একটি হ্যাকার গ্রæপ দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে বø্যাকমেইল করার চেষ্টা করছিল। এই ভিডিও প্রকাশের হুমকীতে আমার কাছে মোটা অংকের অর্থও দাবি করে আসছিল। আমি বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি। বানোয়াট ভিডিওটি একটি ফেক আইডি থেকে পোস্ট দেওয়া হয়। তবে ভিডিওটিতে দেখানো কক্ষটি তার অফিসের বিশ্রাম নেওয়ার কক্ষ এবং ভিডিওর ওই নারী তার কার্যালয়ে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত বলে তিনি নিশ্চিত করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন নাকরার জন্য অনুরোধ করে ছিলেন।
ডিসির আপত্তিকর কর্ম প্রকাশিত হবার অফিসের কর্মচারিরা বলছেন-ডিসির লাল বাতি ও সবুজ বাতি জ¦ালিয়ে সংকেতের মাধ্যমে কর্মচারিদের যাতায়াত করতে বলা হয়েছিল। লাল বাতি জ¦লে উঠলে ডিসির রুমে প্রবেশ নিষেধ ছিল। এখন জানা যাচ্ছে, কেন এমনটা করা হতো। একই সাথে ওই নারী ডিসি অফিসের কর্মচারিদেরও নজরদারিতে রাখতেন। সচেতন মহলের প্রশ্ন হচ্ছে-এই একান্ত কক্ষের ভিডিওটি ওই মহিলা ছাড়া কেও প্রকাশ করার কথা নয়। এই ভিডিওটি প্রকাশের মাধ্যমে ওই নারী ডিসিকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে ছিল কি না? আবার অনেকের ফেসবুক আইডিতে উল্লেখ করেছেন, ডিসির গোপন ভিডিও যিনি ধারণ করেছেন কিংবা ফাঁস করেছেন। তাকে আইনে আওতায় আনা হোক। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দেয়া হোক। কেননা এটি ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়। আবার অনেকেই বলছেন-এই সত্যকে প্রকাশের সাহসীকতা পুরস্কৃত করা হোক। ডিসির এমন অপকর্মের জন্য বিচারের দাবিতে পুরোদেশ স্বোচ্চার। মাঠপর্যায়ে এমন উর্ধ্বতন মহলের কর্মকান্ডকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিহত’র পাশা পাশি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশার প্রহর গুনছে। জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি  এড: মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, জেলা প্রশাসক নিজ দপ্তরে  নারী সহর্কমীর সাথে বিবাহ বন্ধন ছাড়া অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া  এজাতীয় কার্যলাপ প্রশাসনের প্রধান ব্যাক্তির কাছে কোন ভাবেই কাম্য নয় ।



কে এই নারী?
ওদিকে ডিসির সাথে অপকর্মে জড়িত এই নারীর পরিচয় জানতে আগ্রহী দেশবাসি। জামালপুরের ডিসির সাথে অপত্তিকর ভিডিওতে ভাইরাল হওয়া সেই আলোচিত ডিসি অফিসের পিয়নের নাম সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার বাড়ি মাদারগঞ্জ উপজেলা বালিজুড়ি ইউনিয়নের সুখনগরী গ্রামে। সাধনা নিঃ সন্তান দম্পত্তি খাজু মিয়া ও কুমকুম বেগমের পোষ্য মেয়ে হিসেবে বেড়ে ওঠে। কসমেটিক্স সেবন কিংবা অন্যকোন রোগে সাধনার মাথার চুল এবং ভ্রæ’র চুল উঠে টাক পড়ে। এরপর থেকে মাথায় কৃত্রিম চুল লাগিয়ে হেজাব পড়া শুরু করে। জোনাইল গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ফরহাদের সাথে সাধানার বাল্যবিয়েও হয়। ফরহাদের সাথে সংসার চলাকালে তাদের ঘরে জন্ম নেয় এক ছেলে। নাম তার পূর্ণ। ফরহাদ একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করতেন বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন। চরিত্রিক প্রশ্নে ফরহাদের সাথে সাধনার কলহ চলার একপর্যায়ে ২০০৯ সালে স্বামী ফরহাদের আকস্মিক মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর সাধনা জামালপুর বগাবাইদ এলাকায় ভাড়াটে বাসায় অবস্থান নেয়। সেখানে তার বেপরোয়া চলাফিরা সবার নজর কাড়ে। ইতোমধ্যেই সমাজসেবা অফিসে প্রশিক্ষন নিতে গিয়ে জনৈক কর্মকর্তাকে ফাঁদে ফেলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই কর্মকর্তা রাতারাতি বদলী হয়। এরপর টাঙ্গাইলের এক পুলিশের সাথে সম্পর্ক হয়। পরবর্তীতে ওই পুলিশকে সাধনা বিয়ে করে। বেপরোয়া চলাফেরার প্রশ্নে পুলিশের সাথেও সংসার ভেঙ্গে গেলে ফিরে আসে পিত্রালয়ে। আবারো বেপরোয়া চলাফেরা ও বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে এলাকায় নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয়।
স¤প্রতি ডিসি আফিসে পিয়ন পদে চাকুরী করার সুবাদে চাকুরী বানিজ্যসহ ভর্ত্তি বানিজ্যর করার অভিযোগ উঠে। ডিসির ভিডিও কেলেংকারীর দায়ে টক অব দ্যা কান্ট্রি তে পরিনিত হয়। সানজিদা ওরফে সাধনা।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top