রফিকুল আলম, ধুনট (বগুড়া): ঋণের কিস্তি ফাঁস হয়ে বসেছিলো গলায়। ঘরের হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন আর হাঁস-মুরগী বিক্রি করে ঋণের ২ কিস্তর টাকা তুলে নিয়েছে এনজিওর লোকজন। এরপরও বকেয়া ছিলো আরো ৯ কিস্তির টাকা। কিন্তু তা শোধ করার কোনো উপায়ই ছিলো না জুলেখা-শিপন দম্পতির।
এ কারণে তাদের টিনের ঘরটি ভেঙ্গে নিয়ে গেছেন ব্র্যাক নামে এনজিওর কর্মীরা। মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে জুখেলা-শিপন দম্পতি চলে গেছেন গ্রাম ছেড়ে। আর মা-বাবার দুর্ভাগ্যের সঙ্গী হতে হয়েছে তাদের ছয় বছর বয়সের সন্তান শিখাকে। এ ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে যমুনা নদীর বাঁধে আশ্রিত এক পরিবারে।
জুলেখা-শিপন দম্পতির বাড়ি ভান্ডারবাড়ি গ্রামে। শিপনের ২ শতক জমি ছিল। সেখানেই মাথা গোঁজার ঠাই করে নিয়েছিল। কিন্ত রাক্ষুসী যমুনা সেই বসতভিটা গিলে খেয়েছে। শেষ সম্বল ভিটে হারিয়ে শিপন বাঁধে আশ্রয় নেয়। শিপন পেশায় কাঠ মিস্ত্রি। বাঁধের ঢালে টিনের একটি ঘরে বসবাস করতো। কিস্তি খেলাপের কারনে তার সেই ঘরটি বিক্রি করে টাকা নিয়ে গেছে এনজিও কর্মীরা।
ভুক্তভোগী পরিবার ও গ্রামবাসী জানায়, চলতি বছরের জুন মাসে ব্র্যাকের সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার শাখা থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেন জুলেখা-শিপন দম্পতি। যার মাসিক কিন্তি ৬ হাজার ৩০০টাকা। মোট ১১ কিস্তিতে টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু দুই কিস্তি পরিশোধ করার পর পরিবারটি আর কিস্তি দিতে পারছিল না। কিস্তি পরিশোধের জন্য ব্র্যাকের কর্মীরা পরিবারটিকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সন্ধ্যায় ব্র্যাকের ওই কর্মীরা এসে তাদের ঘর বেচে টাকা নিয়ে যান।
এ বিষয়ে শিপন মিয়া জানান, কিস্তির টাকা দিতে না পারায় ব্র্যাকের লোকজন কোথা থেকে একজন লোক এনে বলে তোমাদের থাকার ঘর ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে-বলেই ঘর ভেঙে নিয়ে যায়। আর আমরা অসহায় হয়ে চোখের সামনে নিজেদের মাথা গোঁজার ঘরটা ভেঙে নিয়ে যেতে দেখলাম। যাবার সময় কিস্তির বাকী টাকাও পরিশোধের প্রতিশ্রæতি নিয়েছে। লোক লজ্জায় এ কথা কাউকে না জানিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাতেই ঢাকা শহরে পাড়ি জমিয়েছি।
তিনি আরো জানান, কঠোর পরিশ্রমে সব ঋণ শোধ করা হবে ঠিকই, কিন্তু নিজের জন্মভ‚মি, বসতি গ্রামে আর কোনোদিনই তার ফিরে যাওয়া হবে না। গ্রামে ফেরার কথা বলতেই লজ্জা, অপমান, পালানোর নির্মমতা, কষ্ট-যন্ত্রণার কথা মনে করে মোবাইল ফোনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শিপন।
>> ঋণের কিস্তির জন্য মেয়েকে আটক রাখল এনজিও কর্মকর্তা
উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল বলেন, আমার প্রতিবেশী হলেও শিপন এ ঘটনাটি আমাকে জানায়নি। সে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এই নির্মমতার ঘটনাটি শুনেছি। তবে গ্রামে ফিরে আসার জন্য পরিবারটির সাথে যোগাযোগের করছি।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের কাজিপুর উপজেলা শাখার কর্মসূচি সংগঠক ওসমান গনি জানান, ঋণের কিস্তির টাকা শোধ করতে না পারায় সেই পরিবারটিই ঘর বিক্রি করে ব্র্যাক কার্যালয়ে এসে কিছু টাকা পরিশোধ করেছে। তবে ঘর বিক্রয় কাজের সাথে ব্র্যাকের কেউ জড়িত ছিল না। শিপন ব্র্যাকের মান ক্ষুন্ন করতেই অপপ্রচার করছে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।