এরই নাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়!

S M Ashraful Azom
0
এরই নাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়!
রেজাউল করিম. শেরপুর প্রতিনিধি: দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র তিন জন। একজন প্রথম শ্রেণীর। শিক্ষক চার জন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক ছিলেন অনুপস্থিত। অন্য ৩ জনের মধ্যে একজন বাড়িতে। অপর দু’জন বসে গল্প করছেন। এমন উপস্থিতি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা কালিদহেরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। গত ২৬ অক্টোবর শনিবার ওই বিদ্যালয়ে সরেজমিন গেলে দেখা যায় এমনি চিত্র।

জানা যায়, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গড়জরিপা কালিদহেরপাড় গ্রাম। এ গ্রামে রয়েছে ঐত্যিহাসিক কালিদহ সাগর। ওই কালিদহ সাগর পাড়ের গ্রাম কালিদহেরপা। এখানে বসবাস প্রায় দেড় হাজার পরিবারের। এখানে ২০১১ সালে স্থাপিত হয় গড়জিরপা কালিদহেরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
টিনের দু’চালা চার কক্ষ বিশিষ্ট এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক চারজন। ছাত্রছাত্রী বসার জন্যে রয়েছে ৭/৮টি ব্যাঞ্চ। চারটি কাঠের চেয়ার। একটি টেবিল। দুটি বøাকবোর্ড। নেই খেলার মাঠ। শিক্ষকদের অবহেলা, গাফিলতি, অনিয়ম আর অনুপস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি। অথচ শিক্ষা কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মাসের পর মাস গুটি কয়েক শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক একই পরিবারের। এ জন্য শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসেন নিজেদের ইচ্ছে মতো। বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। পাঠদান হয় কালে ভাদ্রে। এ জন্য ছাত্রছাত্রীরা চলে গেছে অন্য বিদ্যালয়ে। তবে হাজিরা খাতায় এখানো রয়েছে তাদের নাম।   

কথা হয় ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ছাত্রী রাকিবা আকতার রুবাইয়ার সাথে। রুবাইয়া জানায়, তারা স্কুলে আসে। তবে অন্য ক্লাশের ছাত্রছাত্রীর কথা বললে নিরব থাকে সে। একই ক্লাশের শামিম ও মাহফুজ জানায়, তাদের ক্লাশ হয়। প্রথম শ্রেণীর ছাত্র তানভির জানায়, তাকে ক্লাশ করতে হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর ওই তিনজনের সাথে। শিক্ষকদের বাড়ির পাশেই বিদ্যালয়। এজন্য শিক্ষকদের মধ্যে দু’একজন মাঝে মধ্যে এসে তাদের ক্লাশ নেয় বলে জানায় উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা। 

তবে ছাত্রছাত্রী সংকটের সত্যতা নিশ্চিত করে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সামাদের পুত্রবধূ শিক্ষিকা রোজিনা বেগম জানান, তারা নিয়মিত স্কুলে আসেন। ছাত্রছাত্রী হলে ক্লাশ নিবেন। আরেক শিক্ষিকা শাকুরা ইয়াছমিন জানান, তারা ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি নিয়ে এলাকায় অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছেন। এর পরও ছাত্রছাত্রী হচ্ছেনা। এ জন্য বিদ্যালয়ে এলেও ছাত্রছাত্রী সংকটের কারণে ক্লাশ নিতে পারেন না। অপর আরেক শিক্ষিকা  জাকিয়া তামান্না জানান, তাদের বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় প্রথম শ্রেণী হতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৯৯ জন ছাত্রছাত্রীর দেখানো হয়েছে।

এমন উপস্থিতি দেখানো কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ছাত্রছাত্রী এখানে ছিল। তারা নিয়মিত আসতো। বন্যার পর থেকে এসব ছাত্রছাত্রী আসেনা। ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সামাদ জানান, এলাকার লোকজন বেশিরভাগ অশিক্ষিত। তারা ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করাতে চায়না। এজন্য ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কম। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হলে উপস্থিতি বাড়বে। এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুশ শিহারের সাথে। তিনি বলেন, স্কুল পরিদর্শনের দায়িত্ব এটিওদের। তবে আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয ব্যবস্থা নিবো।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top