বীরপ্রতীক তারামন বিবির প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালন

S M Ashraful Azom
0
বীরপ্রতীক তারামন বিবির প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালন
শফিকুল ইসলাম,রৌমারী প্রতিনিধি: বীর প্রতীক তারামন বিবির প্রথম মৃত্যু বাষিকী পালন করা হয়েছে। সকাল ৯টায় তার নিজ বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার অনুষ্ঠান করা হয়। বীরপ্রতীক তারামন বিবির রুহের মাগফিরাত কামনা করেন অনুষ্ঠানের উপস্থিত সকল মুসিল্লিগণ। এতে ওই এলাকার সর্বস্তরের মানুষ দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।

উল্লেখ্য যে, এই দিনে বীর প্রতীক তারামন বিবি ফুসফুস,ডায়বেটিস ও স্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল (৬২) বছর।

২০১৮ সালে পহেলা ডিসেম্বর শুক্রবার রাত দেড় টার দিকে রাজিবপুরের কাঁচারিপাড়া নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে রাত ৮টায় তিনি গুরুতর অসুস্থ্য হলে রাজিবপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো.দেলোয়ার হোসেন বীর প্রতীক তারামন বিবির বাড়িতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসায় কোন উন্নতি না হওয়ায় রাত দেড় টায় চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রাজিবপুর উপজেলার তালতলা কবর স্থানে দুপুর ২টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।

গার্ড অফ অনারে অংশ গ্রহন করেন কুড়িগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম,কুড়িগ্রাম-৪আসনের সাবেক এমপি মো. রুহুল আমিন, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো.শফিউল আলম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেত্রীবৃন্দসহ হাজার হাজার মানুষ। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, ১ছেলে  ১মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

গত ৭ নভেম্বর ২০১৮ সালে তারামন বিবির শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে প্রথমে রাজিবপুর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা সিএইচএম হসপিটালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বীরপ্রতীক তারামন বিবি কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুস সোবহান ও মায়ের নাম কুলসুম বেগম। তার স্বামীর নাম আব্দুল মজিদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারামন বিবি ১১নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। সে সময় ১১নং সেক্টরের নেতৃত্বদেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি বীরপ্রতীক তারামন বিবিকে ক্যাম্পে রান্নার কাজের জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামন বিবির বয়স ছিল মাত্র ১৩/১৪ বছর। মহিব হাবিলদার তারামন বিবির সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে তাকে অস্ত্র চালানো শেখান। একদিন দুপুরের দিকে তারামন বিবি ও সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকহানাদার বাহিনী একটি গানবোট নিয়ে তাদের দিকে আসছে।

তারামন বিবি তার সহযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে অংশ নেন এবং শত্রæদের ঘায়েল করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও তারামন বিবি পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একাধীক অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন।

পাকবাহিনী কয়েকবার মুক্তিযুদ্ধাদের ক্যাম্পে হানা দিয়ে ছিল। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রতিবারেই প্রাণে বেঁচে যান। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭৩ সালে তৎকালিন সরকার মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে তার সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে বীর প্রতীক উপাধীতে ভুষিত করেন। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহ জেলার একজন গবেষক তাকে প্রথম খুঁজে বের করেন। এরপর নারী সংগঠকগুলো তারামন বিবিকে ঢাকায় নিয়ে যান। ১৯৯৫ সালে ১৯ ডিসেম্বর তৎকালিন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে তারা মন বিবিকে বীররেত্বর পুরস্কার “বীরপ্রতীক”পদক তার হাতে তুলে দেন।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top