ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, বললেন করণ থাপার

S M Ashraful Azom
0
ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, বললেন করণ থাপার
সেবা ডেস্ক: প্রতিবেশি দেশ ভারতকে বিভিন্ন দিক দিয়ে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের স্বনামধন্য সাংবাদিক ও লেখক করণ থাপার। সম্প্রতি ভারতীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি. কিষাণ রেড্ডির বাংলাদেশকে নিয়ে করা বিতর্কিত মন্ত্যব্যের বিপরীতে এ মন্তব্য করেছেন তিনি।
রেড্ডি এক বক্তব্যে বলেছেন, ভারত নারগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিলে অর্ধেক বাংলাদেশ খালি হয়ে যাবে। তারা চলে আসবে ভারতে।

রেড্ডির এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন থাপার। ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে শনিবার এক বিশ্লেষণী নিবন্ধে অর্থনৈতিক, জীবনমান ও নারী অগ্রযাত্রাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকা তুলে ধরেছেন তিনি।

রেড্ডির মন্তব্যকে বাংলাদেশ নিয়ে অজ্ঞতা বলেও অভিহিত করেছেন সিএনএন-আইবিএন ও ইন্ডিয়া টুডের সঙ্গে কাজ করা এই সাংবাদিক।

হিন্দুস্তান টাইমসে তিনি লিখেছেন, ‘সত্যি বলতে কী, আমি হেনরি কিসিঞ্জারকে দোষারোপ করি। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে তিনি বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। এটা ঠিক যে ওই সময় বাংলাদেশের চিত্র সে রকমই ছিল। একের পর এক ভয়াবহ বন্যায় এমনটা ঘটেছিল। কিন্তু আজ বাংলাদেশ অন্য এক রাষ্ট্র। ’

‘আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই; তবে বাংলাদেশ সম্পর্কে মনে হয় বিশ্বসম্প্রদায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মনোভাবটা বদলাতে পারেনি। কিন্তু আমাদের ভারতীয়দের অন্তত সেই সত্তরের দশকের মনোভাব পোষণ করার কোনো অধিকার নেই। যদিও আমাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি গত সপ্তাহে তেমন মনোভাবই প্রকাশ করেছেন।’

ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান প্রাণনাথ থাপারের ছেলে করণ থাপার লিখেছেন, ‘রেড্ডির এই মনোভাব কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং আক্রমণাত্মক। তিনি জানেনই না যে অধিকাংশ সূচকে না হলেও জীবনযাত্রার মানসহ অনেক সূচকে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।

প্রথমত, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার। আমাদের প্রবৃদ্ধি যেখানে ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, সেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ৮ শতাংশের দিকে। দ্বিতীয়ত, ভারত যখন ১৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স দিয়ে চীনকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন, তখন বাস্তবতা হলো চীনের বিনিয়োগ যে দুটি দেশে যাচ্ছে, বাংলাদেশ তার একটি ‘

‘অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২০১৯ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়েছে। আর ভারতের কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে লন্ডন কিংবা নিউ ইয়র্কের রাস্তাগুলো এখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ভরে আছে। কিন্তু সেখানে লুধিয়ানা কিংবা তিরপুরে তৈরি পোশাক খুবই কম।’

‘যেসব মানদণ্ড বাংলাদেশকে ভারতের চেয়ে আলাদা করেছে, অর্থনীতি সেগুলোর একটি। পরোক্ষভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশের জীবনযাত্রা ভারতের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর গড় আয়ু যথাক্রমে ৭১ ও ৭৪ বছর। অন্যদিকে ভারতে ৬৭ ও ৭০ বছর। আপনি যখন এসব পার্থক্য বিশ্লেষণ করবেন, তখন অবাক হবেন। ভারতে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২২ দশমিক ৭৩। কিন্তু বাংলাদেশে ১৭ দশমিক ১২। ভারতে নবজাতকের মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৯ দশমিক ৯৪; বাংলাদেশে ২৫দশমিক ১৪। ভারতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার হাজারে ৩৮ দশমিক ৬৯; বাংলাদেশে ৩০ দশমিক ১৬।’

‘এরপর আসা যাক নারীদের বিষয়ে। বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ; ভারতের ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশ এবং এটা বাড়ছে। অন্যদিকে ভারতে এই হার ২৩ শতাংশ এবং গত এক দশকে তা ৮ শতাংশ কমেছে।’

করণ থাপার লিখেছেন, ‘সব শেষে আসা যাক ছেলে-মেয়েদের হাই স্কুলে ভর্তির বিষয়ে, যা দেখে ভবিষ্যতের উন্নয়নের ধারণা পাওয়া যায়। এটি ভারতে শূন্য দশমিক ৯৪, আর বাংলাদেশে ১ দশমিক ১৪।

‘সুতরাং, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন যে কিছু ভারতীয় নাগরিকও অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, তখন সেটা সত্য বলেই মনে হয়।’

তিনি আরো লিখেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার মতো প্রবণতা খুব বেশি নেই। যে পরিসংখ্যান আমি উদ্ধৃত করেছি তাতে দেখা যাচ্ছে ভারতের বৈধ নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে কীট হওয়া বেশি আকর্ষণীয়।’

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top