কাজিপুর ( সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : সিরাগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিমুলদাইড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ২৪ টি শ্রেণি শাখায় একযোগে এক হাজার দুইশ পঞ্চাশজন শিক্ষার্থী পাঠদানে অংশ নিচ্ছে।
গত দশ বছরে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে বেশ কয়েকবার শীর্ষস্থান প্রাপ্ত এই বিদ্যালয়টি বর্তমানে তীব্র শ্রেণিকক্ষ সংকটে ধুকছে। এতে করে মারাত্মকভাবে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে গত সাতদিন যাবৎ বিদ্যালয়টির আসন্ন এসএসসির দুটি শাখার পরীক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন ওই বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে করোনার নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কারণে সকল শিক্ষার্থী একযোগে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে। এবছর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ২০২০ সালে করোনায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকাকালিন সময়ে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা ভবন উর্ধমুখী সম্প্রসারণ কাজের জন্যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদার ওই ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরুই করেনি। ফলে শ্রেণি সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এজন্যে বিদ্যালয়ের ভেতরে অস্থায়ীভাবে ত্রিপল দিয়ে তৈরি শেডে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি শ্রেণিতে রয়েছে তিন থেকে চারটি করে শাখা। প্রতিটি শাখায় পঞ্চাশ থেকে ষাটজন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। দুপুরের প্রচন্ড গরমের মধ্যে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। এসময় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রমিজা আক্তার জানায় ‘ গরমে আমরা ঘেমে যাই। ঘাম দিয়ে বই খাতা ভিজে যায়। স্কুল ড্রেস প্রতিদিন পরিস্কার করতে হয়। ক্লাস করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়।’
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফিন রহমান জানায়, ‘গরমের মধ্যে ক্লাসে মন বসে না। আর বাড়িতে গিয়ে ক্লান্তিতে সন্ধ্যা হলেই চোখে ঘুম চলে আসে।’
সপ্তম শ্রেণি গ শাখার শিক্ষক ইমরুল কায়েস জানান, ঐহিত্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠানের এমন দশা , অথচ দেখার কেউ নেই। আমরা এভাবে আর কয়দিন ক্লাস নিতে পারবো। গরমে দুইক্লাস পরেই শিক্ষার্থীরা পালিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছে। সামনে ঝড় বাদলের সময় আসছে। তখন কি হবে?
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু মনেপ্রাণে শিক্ষানুরাগী। শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম সংকটের আপাতত অস্থায়ী সমাধান হিসেবে তিনি সত্তর হাত লম্বা ও চব্বিশ হাত প্রস্থের একটি ত্রিপল ও সালু কাপড়ের বেড়া যুক্ত ঘর নির্মাণ করেছেন। সেখানে ছয়টি শাখার পাঠদান চলে প্রতিদিন। এমপিভূক্ত এবং খন্ডকালিন সহ মোট ৪১ জন শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, প্রতিষ্ঠানটি জেলার শ্রেষ্ঠ স্কুলের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। উপজেলা, জেলা এমনকি বিভাগীয় পর্যায়েও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সুনাম অর্জন করে চলেছে। করোনায় প্রতিষ্ঠান বন্ধর মধ্যে স্কুলের একটি ঘর উপরের দিকে সম্প্রসারণের কাজ পাই। ঠিকাদারের কথামতো দ্রæত ওই ঘরটি আমরা ভেঙ্গে সরিয়ে নেই। দুঃখের বিষয়, আজও ঠিকাদার নির্মাণ কাজ শুরুই করেনি। শুনলাম রিটেন্ডার করার চেষ্টা করছে। দিকে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরে যখন খুলেছে তখন অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। শ্রেণিসংকট আমাদের পাঠদান কাজকে দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। এতে করে আসন্ন এসএসসি শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত পাঠদান করাতে পারছি না। এখনই শ্রেণি সংকটের অবসান ঘটানো না গেলে বিদ্যালয়ের ফলাফল বিপর্যয় ঘটবে। আর বর্ষা সিজনে যে কি হবে সেই শঙ্কায় আছি।’আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকষয়ণ করছি যাতে করে দ্রæত ওই ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং নতুন করে একটি ভবনের বরাদ্দ দেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।