কাজিপুরে চার বছর যাবৎ এতিম নেই মোহাম্মদ আলী শিশু সদনে

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: এতিমখানাটির নাম মোহাম্মদ আলী শিশু সদন। অবস্থান সিরাজগঞ্জের কাাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামে। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই এতিমখানাটি জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে ( রেজি নং-সিরাজ-৩৯৬/৯৬।)  কার্যক্রম শুরু করে। 

কাজিপুরে চার বছর যাবৎ এতিম নেই মোহাম্মদ আলী শিশু সদনে
কাজিপুরে চার বছর যাবৎ এতিম নেই মোহাম্মদ আলী শিশু সদনে-  সাড়ে তের লাখ টাকা লোপাট


শুরতে এতিম থাকলেও কয়েক বছর চলার পর থেকে এতিমের সংখ্যা কমতে থাকে।  ২০২০ সালে করোনা শুরু হলে শিশু সদনটি পুরোপুরি এতিমশূন্য হয়ে পড়ে। 

কিন্তু সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এতিমখানাটির পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। 

গ্রামবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে এই কমিটির কাজের কোন অগ্রগতি নেই।


কাজিপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫  অর্থবছরগুলোতে সরকারিভাবে এতিমখানার নামে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করেছেন পরিচালনা কমিটি। তিন অর্থবছরে এতিম শিক্ষার্থীপ্রতি ২হাজার টাকা হিসেবে ২০ জন এতিমের জন্য বরাদ্দ হতো প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা। 

সব মিলিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।  পরবর্তীতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আবারও ভাড়াটে এতিম ও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে প্রথম কিস্তির বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন কমিটির লোকজন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সে বরাদ্দের টাকা স্থগিত করে উপজেলা সমাজসেবা অফিস।


আরও পড়ুন:



নিয়ম রয়েছে, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বেসরকারি এতিমখানা কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত কমিটির স্বাক্ষরিত নিবাসী এতিমদের তালিকা ও ব্যয়ের বিল ভাউচার দাখিল করবেন। 

এতিমখানার স্থানীয় সরকারি তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নিবাসী এতিম শিশুর সংখ্যা, কমিটির মেয়াদ যাচাই-বাছাই করে এতিম শিশুর খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসার ব্যয় বিল ভাউচার অনুমোদন দেবেন। 

একইসাথে বেসরকারি এতিমখানায় অবস্থানরত এতিমের মোট সংখ্যার সর্বোচ্চ ৫০ ভাগ ক্যাপিটেশন গ্রান্ডের জন্য বিবেচিত হবে। অথচ প্রতিষ্ঠার পর থেকে  'মোহাম্মদ আলী শিশু সদনটিতে এখন পর্যন্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিদর্শনই করেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

আরও অভিযোগ রয়েছে এই অফিসের যোগসাজসেই গত কয়েকবছর যাবৎ এতিম শিশু না থাকলেও টাকা বরাদ্দ ও উত্তোলন যথারীতি সম্পন্ন হয়েছে। 


গত সোমবার সরেজমিন ওই এতিমখানায় গিয়ে দেখা গেছে, গাছের সাথে ঝুলছে এতিমখানার সাইনবোর্ড। ধুলো জমে থাকা দরজায় তালা ঝুলছে, বারান্দায় স্তূপ করে রাখা খড় আর লাকড়ি। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি কুড়িজন শিশুর আবাসস্থল।  

ঘরের জানালা দিয়ে চোখ মেলতেই চোখে পড়লো আরও একটি সাইনবোড দেখা গেলো। তাতে লেখা  মোহাম্মদ আলী শিশু সদন।  নেই শিক্ষকের উপস্থিতি।  দেখেই বোঝা যায় এটি অনেকবছর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।  


এসময় কথা হয় এতিমখানার পাশের বাড়ির বাসিন্দা মতলেব নামের এক বৃদ্ধের সাথে।  তিনি বলেন, এহান দিয়া যাওয়া আসা হরি ৪-৫ বছর ধইরা কোন এতিম দেহি না। এতিমখানা খোলাও দেহিনা। 


আসাদুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, এখানে করোনার সময় থেকেই কোন এতিম নাই। কিন্তু হালিম হুজুর তার মাদ্রাসার ছাত্র নিয়ে এসে ভিডিও করে সেই ভিডিও দেখিয়ে টাকাগুলো তোলে।


 এসময় জয়নাল নামের এক ব্যক্তি বলেন, 'নিজেরাই কমিটি গঠন করেছে। হালিম হুজুর মাদ্রাসা থেকে ছাত্র নিয়ে এসে ছবি তোলেন। সেই ছবি অফিসে জমা দিয়ে কমিটির সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক টাকা উত্তোলন করেছেন। অথচ এতিমখানা বন্ধ অনেকদিন। কোন এতিম বা শিক্ষক কিছুই নাই।


এতিমখানা সংলগ্ন চকপাড়া দারুস সালাম কওমি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ বলেন, পাঁচ ছয় বছর ধরে এতিমখানায় কোন এতিম নেই। আমাদের মাদ্রসার কয়েকটা ছাত্র ছিল তাদেরকে এতিম দেখিয়ে যখন টাকা তোলে এতিমখানার কমিটির লোক তখন আমরা মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দিয়েছি।


এতিমখানা কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, “এই মাদ্রাসায় আমরা জমি দিছি। টাকা তুলছি। অনেক বাকি আছিল। সব পরিশোধ করছি। এতিমখানার জন্য মেলা কেনাকাটা করছি।” তবে এতিম না থাকলেও  টাকা তুলেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন,“ আমাকে সময় দেন এতিম নিয়ে আইসা দিমু।”


এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক ও কুনকুনিয়া আল-ফালাহ নূরানিয়া হাফিজিয়া কওমি মাদ্রসার মোহতামিম মাওলানা আব্দুল খালেক  ২০২১ সালের পরে শিশু সদনটিতে কোন এতিম নাই স্বীকার বলে বলেন, “ এতিম ভর্তি আছে। আমাকে সময় দিলে সব হাজির করতে পারবো।”  নিজেরম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এতিম দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করেছেন কেন? এমন প্রশ্নের  উত্তর না দিয়ে বলেন,“ আমার কাছে সব কাগজপত্র আছে। ফয়সাল স্যার তদন্ত করতেছে, তার কাছে সব কাগজ জমা দিছি। তিনিই সব দেখবেন । আপনারা দেখার কেউ না।”


তদন্ত কমিটির প্রধান কাজিপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার ফয়সাল আহমেদ বলেন, 'বেশ কিছুদিন আগে আমাদের তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। ব্যস্ততার কারণে পুরো তদন্ত শেষ করতে পারিনি। তবে আমরা এতিমখানায় গিয়েছি। কোন এতিম পাইনি। পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে এতিমখানাটি। শীঘ্রই প্রতিবেদন জমা দেবো।”


কাজিপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সোহেল রানা বলেন, “আমি এতিমখানাটি পরিদর্শন করতে পারিনি। সিরাজগঞ্জ থেকে এসে এখানে সপ্তাহে একদিন অফিস করি। তবে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।”


সার্বিক বিষয়ে জানতে সোমবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সিরাজগঞ্জের সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান খান বলেন, বিষয়টি দেখতেছি। 





সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top