বকশীগঞ্জ(জামালপুর)প্রতিনিধি: জামালপুরের বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় পাঠদানের ভবনটি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ ভবনেই প্রতিদিন পাঠদান চলছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবকরাও রয়েছেন চরম আতঙ্কে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালের বার্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। বর্তমানে এখানে শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৪৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। তবে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকপদ সংখ্যা ৬ জন হলেও প্রধান শিক্ষক সহ দুইজন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ২০০২ সালে নির্মাণ করা বিদ্যালয়ের ১ম তলা ও চার কক্ষ বিশিষ্ট পুরনো ভবনটির ছাদ ও দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝেই ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পরে ক্লাস রুমে। ফলে পাঠদানে চরম বিঘ্ন ঘটছে। সব সময় আতঙ্কের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের। আতঙ্কের কারণে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে এই বিদ্যালয়ে।
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার, মাহবু্ব ও তায়েব মন্ডল জানান, সব বিদ্যালয়ে নতুন ভবন হলেও আমাদের বিদ্যালয়ে আজ পর্যন্ত কোন ভবন হয় নি। আমাদের পুরনো ভবনেই আতঙ্কে ক্লাস করতে হয়। তাই আমাদের অভিভাবকদেরও দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।
আরও পড়ুন:
স্থানীয় অভিভাবক স্বপন মন্ডল বলেন, আমার ছেলে তায়েব মন্ডল এই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে কয়েকদিন আমার কাছে অভিযোগ করেছে বাবা আমাদের বিদ্যালয়ের ছাদ ও ওয়ালে ফাটল ধরেছে কখন জানি মাথায় পরে যায়। স্যারেরা কোন এর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ছেলের অভিযোগ শুনে বিদ্যালয়ে এসে দেখি সত্যিই ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা। আমরা ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকি কখন জানি ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় ছাদ ধসে পরে। তাই কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এর প্রতিকার চাই।
বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থার বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল মোল্লা বলেন, বিদ্যালয়ের জন্য বিকল্প কোনো শ্রেণিকক্ষ বা ঘর না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অফিস সহ চারটি কক্ষের মধ্যে তিনটিতেই ফাটল ধরাই শিক্ষার্থীরাসহ আমরা অনেক ভয়ে আছি। আর অভিভাবকরাও শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। অতিদ্রুত বিকল্প পাঠদানের ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তিনি আরও বলেন এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ দুইজন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এতে চারজন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়াও কঠিন হচ্ছে।
এব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: আবুল কালাম বলেন, ভবনটির অবস্থা এতটাই নাজুক যে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা অনেক ভয়ভীতির মধ্যে দিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সবসময় উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন ভবনের আবেদন করেছি ও অতিদ্রুত নতুন ভবনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি।
এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কামালের বার্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মাণ জরুরী। সেই সাথে দ্রুত নিরাপদ পাঠদানের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান। তারা এ বিদ্যালয়ের নিরাপদ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ করেছেন করেছেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।