নেপালের আন্দোলন: যেখান থেকে শিখতে পারে বাংলাদেশ!

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

সেবা ডেস্ক: আন্দোলনের আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে হিমালয়কন্যা নেপাল। দেশটিতে চলমান আন্দোলনের জেরে দেশেরে বিভিন্নস্থানে আগুনে পুড়ে গেছে অসংখ্য সরকারি স্থাপনা। নেপালে সাম্প্রতিক সহিংসতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ ও অসন্তোষ, বিশেষ করে জেন জি প্রজন্মের।

Nepals-movement-What-Bangladesh-can-learn-from


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবলভাবে সক্রিয় এই প্রজন্ম সরকারের নীতিনির্ধারণে নিজেদের উপেক্ষিত মনে করছে। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক জনপ্রিয় সামাজিক মিডিয়া অ্যাপ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ছিল আন্দোলনের সরাসরি ট্রিগার। তবে এই আন্দোলন শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়া নয়। এর গভীরে রয়েছে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক দুর্নীতি ও অকার্যকর শাসনব্যবস্থার প্রতি তরুণদের হতাশা। নেপালে শিক্ষিত তরুণদের জন্য যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। প্রতিবছর হাজার হাজার যুবক বিদেশে কাজ খুঁজতে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি বহু নেপালি তরুণ কর্মসংস্থান খুজতে যেয়ে ইউক্রেনে ভাড়াটে সেনা হিসেবে কাজ করেছে। অথচ দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবার ও ক্ষমতাশালী অভিজাতরা সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। এই বৈষম্য ও বঞ্চনা জেন জি প্রজন্মকে রাষ্ট্রের প্রতি ক্রমশ আস্থাহীন করে তুলেছে। 

বাংলাদেশের ২০২৪ এর আন্দোলনের মতই, নেপালের সহিংসতার মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রদেশে সরকারি অফিস, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, এমনকি পার্লামেন্ট ভবন পর্যন্ত আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করছে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে এবং একাধিক সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করেছে। কিছু জায়গায় কারাগার ভেঙে কয়েদিদের পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। আন্দোলন এই মুহুর্তে থেমে গেলেও বেশ কিছু গুপ্ত গ্রুপ এখনও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা করছে। যেমন ভারতের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন কিছু গ্রুপ যারা নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে চায় তারা পর্দার আড়াল থেকে সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন বলে ধারণা করছে আন্দোলনকারীরা। 

এই জায়গায় নেপালের আন্দোলনকারীরা বেশ বুদ্ধিমত্তর পরিচয় দিয়েছেন। যেই মুহুর্তে তারা বুঝতে পেরেছেন আন্দোলনের আড়ালে নেপালে সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছে ভারত , তখনই তারা সেনাবাহিনীর সাথে কোঅপারেট করা শুরু করেছে। এবং ধীরে ধীরে নেপালের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছে। এই জায়গায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি একবার চিন্তা করে দেখুন। সেনাবাহিনী যখন ৫ই আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলার কি ভয়াবহ অবস্থা!

নেপালের আন্দোলনকারীদের মব নিয়ে পলাতক সরকারের সম্পত্তি দখলের ইচ্ছা নেই। এসব করার লোভ নেই, যার জন্য নেপাল দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। তারা মূলত ক্ষমতার অংশ না হয়ে প্রেসার গ্রুপ হিসাবে থাকছে। সদ্য সাবেক প্রধান মন্ত্রী এই মুহুর্তে সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছেন। কেউ তার বিচার চেয়ে মব করছে না বরং বিচার ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখছে।  

 কিন্তু বাংলাদেশের সবকিছু কেমন অস্থির! হিমালয়ের বাসিন্দা নেপালিদের হৃদয় হিমালয়ের মতন। আর বাংলাদেশের নাতিষীতোষ্ণ আবহাওয়া আমাদের চরিত্রকে গিরগিটির মত করে দিয়েছে। যার জন্য ১ বছরেও বাংলাদেশ স্বাভাবিক হতে পারেনি বাংলাদেশের অবস্থা! 

এর কারণ নেপাল সবচেয়ে ভাগ্যবান ওদের কোন পিণাকী-ইলিয়াস-কনক সারোয়ার নেই। থাকলে আর শান্তির মুখ দেখা লাগত না! ৫ তারিখের পর থেকে সহিংসতা উসকে দিতে নিরলস কাজ করেছেন তারা। দেশে সংস্কার বনাম নির্বাচন এমন একটি অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তারা! অথচ নরমালাইজেশন আনার জন্য নেপাল এরই মাঝে নির্বাচন ঘোষণা করে দিয়েছে। কারণ, ওরা অভিজ্ঞতা থেকে ভালো বোঝে। নেপাল এর আগে ৪ বছর নষ্ট করেছে নতুন সংবিধান বানাতে যেয়ে। এতে নেপালে অস্থিরতা বেড়েছে। বারবার সরকার বদল হয়েছে।

 আমাদের এখানে এখনও নির্বাচন নিয়ে শংকা আছে। নানা বিতর্কে রাজনীতির মাঠ উত্তাল আছে। ১ বছর হয়ে গেছে আধা-ছাত্র, আধা-রাজনীতিবিদ কিছু তরুণ এখনও ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ, চাদাবাজিতে লিপ্ত। অথচ নেপালী শিক্ষার্থরা কিন্তু পড়ার টেবিলে ফিরে গেছে। আমরা কি প্রতিবেশিদের থেকেও কিছু শিখতে পারবো না?




সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top