সেবা ডেস্ক: বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত আলোচনায়, যেখানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ‑২০২৫ অনুসারে “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী”র সংজ্ঞায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
![]() |
| সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছে: প্রস্তুতি, সম্ভাবনা ও বিপদ-বিশ্লেষণ |
এই পরিবর্তন শুধু প্রশাসনিক নয়; এটি সেনাবাহিনী-র ভূমিকা, সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক, জনমত ও নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-২০২৫ গত ২৩ অক্টোবর তারিখে কর্তৃপক্ষের বৈঠকে অনুমোদিত হয়। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় নির্বাচনী কার্যক্রমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ববহুল বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধি, হলফনামায় আয়-ব্যয়ের তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা ও ইভিএম সম্পর্কিত বিধানের বিলুপ্তি-সহ অন্যান্য পরিবর্তনও আনা হয়েছে।
এই পরিবর্তনের মূল পটভূমি হলো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা — যেমন জনবহুল নির্বাচন, সন্ত্রাসবদ্ধ কর্মকাণ্ড, সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ অপরাধ। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ও সংস্থান রয়েছে বলেই প্রশাসনিকভাবে এই পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়েছে।
সাধারণভাবে সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব হচ্ছে দেশীয় সসীম হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ যুক্ত হলে তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, রিসোর্স ও ফোকাস বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব পালনের কারণে বাহিনী হয়ত তার যুদ্ধ-প্রস্তুতি কাঠামো ও বহিরাগত হুমকার প্রতিক্রিয়ায় মনোযোগ কমিয়ে ফেলতে পারে।
সেনাবাহিনীর অন্যতম গুণ হলো রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ও পেশাগত স্বাতন্ত্র্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী নিয়োজিত হলে তারা রাজনৈতিক বা সামাজিক উত্তেজনায় সরাসরি যুক্ত হতে পারে—যেমন বিক্ষোভ, নির্বাচন-পরবর্তী উত্তেজনা বা জন সমাবেশ। এতে বাহিনীর নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ও জনবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রয়েছে। সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিত অংশ নিলে প্রশাসনিক দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব কোথায় শেষ হয় সেখানেই বিভ্রাট দেখা দিতে পারে। দায়িত্ববিভাজন অস্পষ্ট হলে বাহিনী ও পুলিশ, প্রশাসন মধ্যে দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
সেনাবাহিনী যদি অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগে যুক্ত হয়, তাহলে তাদের সাধারণ জনগণ ও সামাজিক পরিবেশের সাথে সংস্পর্শ বাড়ে। এই সংস্পর্শে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, হয়রানি বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠতে পারে। এমন ঘটনা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে বিপন্নতা সৃষ্টি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
যদিও ঝুঁকি রয়েছে, তবে এই সিদ্ধান্তে কিছু দীর্ঘ-মেয়াদি সুবিধাও রয়েছে—বিশেষ করে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়।
সংকট মুহূর্তে সেনাবাহিনী দ্রুত ও সংগঠিতভাবে কাজ করতে সক্ষম; আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের দক্ষতা কার্যকর হতে পারে।
জনসাধারণের চোখে সেনাবাহিনী সাধারণত সবচেয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে তাদের অংশগ্রহণ এক ধরনের নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টি করতে পারে।
সীমান্ত এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার মিলিত চ্যালেঞ্জ রয়েছে—অস্ত্র, মাদক, সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যকলাপ সীমান্তভিত্তিক হলেও অভ্যন্তরীণ প্রভাব ফেলে। সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ হলে এই সংযোগ আরও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে।
তবে এই সুবিধাগুলো সঠিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্পষ্ট সীমারেখার অধীনে প্রয়োগ করতে হবে; অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক ফল হতে পারে।
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করা ঠিক হবে—সেনাবাহিনীকে অভ্যন্তরীণ নিয়মিত দায়িত্বে নামানো মূল কাঠামোর পরিবর্তনের নির্দেশ নয়।
সেনাবাহিনীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভূমিকা যদি হয়, তবে তা অবশ্যই সীমিত, সময়সাপেক্ষ ও আইনগতভাবে সংজ্ঞাবদ্ধ হবে।
সেনাবাহিনী আইন প্রয়োগে অংশ নিলেও চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি থাকতে হবে বেসামরিক সরকারের অধীনে। তদারকিতে সেনাবাহিনীর গুরুদায়িত্ববোধ ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
সেনাবাহিনী প্রস্তুতি ও দক্ষতা যাতে বিপর্যস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে—অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব তাদের যুদ্ধ বা বহিরাগত হুমকার প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে; জনমত ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন উভয়ের জন্যই এটি জরুরি।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী-কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই পদক্ষেপ সঠিকভাবে প্রয়োগ হলে সংকট পরিস্থিতিতে কার্যকর প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারে। তবে তার সঙ্গে রয়েছে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব।
অতএব, এই পরিবর্তন নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় , প্রথমে সিভিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সক্ষমতায় উন্নীত করা, তারপর সেনাবাহিনীকে বিশেষ, স্পষ্ট ও সময়সাপেক্ষ দায়িত্ব দেওয়া হবে—এটাই দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর স্বার্থে যুক্তিসঙ্গত পথ।
না হলে, এই নীতিগত পরিবর্তন অদৃশ্যভাবে সেনাবাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের মধ্যে বিভাজন, দায়িত্বের দ্বন্দ্ব ও জনআস্থার ক্ষয় সৃষ্টি করতে পারে।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
সেনাবাহিনী- নিয়ে আরও পড়ুন

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে, একজন পলাতক: সেনাসদর

খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইউপিডিএফ-এর গুলিবিনিময়, অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি রয়েছে সেনাবাহিনীর

কাকরাইলে রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ: সেনাবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

কুড়িগ্রামে সেনাবাহিনীতে অনুপ্রেরণা বিষয়ক সেমিনারের উদ্বোধন


খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।