লিয়াকত হোসাইন লায়ন: জামালপুরের ইসলামপুরে তিনটি পরিবারে নারী-পুুরুষ মিলিয়ে ১২ জন সদস্যই মুখজুড়ে লম্বা লোম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট আর বিড়ম্বনার মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
![]() |
ইসলামপুরে শরীরে প্রাণীদের মত লোম নিয়ে তিনটি পরিবারের মানবেতর জীবন-যাপন |
বংশগতভাবে এসব পরিবারের সদস্যরা মুখ এবং শরীরে লম্বা লোম নিয়ে কষ্ট করলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে চিকিৎসা করাতে না পারায় প্রতিনিয়তই হতাশায় দিন কাটে তাদের।
বংশগতভাবে এসব পরিবারের সদস্যরা মুখ এবং শরীরে লম্বা লোম নিয়ে প্রায় ২০০ বছর থেকে সমাজে অবহেলিত হয়ে আজও প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সমাজে অবহেলিত হয়ে দিন কাটালেও আর্থিক অস্ব”ছলতার কারণে তারা চিকিৎসা করাতে পারেননি। এলাকায় তাদেরকে ‘লোমমানব’ বলে কটাক্ষ করা হয়ে থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইসলামপুর পৌর এলাকার উত্তর দরিয়াবাদ ফকিরপাড়া গ্রামের ৩২ বছরের শিরিনা আক্তার। বয়সে ৩২ হলেও শিরিনা লম্বায় মাত্র আড়াই ফুট, বাঁকা মেরুদন্ডের উপর বিশাল কুজ্জ আর মুখজুড়ে লম্বা দাড়ি।
![]() |
ইসলামপুরে শরীরে প্রাণীদের মত লোম নিয়ে তিনটি পরিবারের মানবেতর জীবন-যাপন |
প্রথম দেখায় পুরুষ ভেবে যে কোন মানুষের ভুল হলেও, মুখজুড়ে লম্বা লোম নিয়েই জন্ম হয় শিরিনার। বয়স বাড়ার সাথে শারীরিক উচ্চতা না বাড়লেও মুখের লোম ক্রমেই বেড়ে দাড়িতে রূপান্তর হয়েছে। স্কুলে পড়ার সময় সহপাঠিরা তাকে নিয়ে উপহাস করলেও মনে চেপে রাখত কষ্ট। বাবা সিরাজ শেক মারা যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় তার লেখাপড়া, অভাবের সংসারে যেখানে দুবেলা খাবার জোটেনা সেখানে চিকিৎসা করানোটা স্বপ্নাতীত।
এমন দুঃসহ জীবন শুধু শিরিনার একার নয়, তার মা কমিলা বেওয়া(৬২), ভাই করিম শেক(৪২), জোনাব আলী মন্ডল(৫৫), তার মেয়ে জুলেখা আক্তার(২৫), ছেলে আক্রাম(১৩), নজরুল(৮), ছোট দুই মেয়ে আলেয়া(৫) ও তাজমীন(৩), মমতাজ মন্ডল(৩৬), তার ছেলে আকাশ মন্ডল (১২) এবং আসাদ মন্ডল (৭) একই বংশের তিনটি পরিবারের বার সদস্যের।
প্রজন্মের পর প্রজন্মে তারা সবাই মুখসহ সারাদেহে এমন অস্বাভাবিক লোম নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। অতীতে তাদের বাপ-দাদারা এভাবেই জীবন যাপন করে মৃত্যুবরণ করেছেন। পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থাও খারাপ। তাই তারা এই বিরল রোগের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করাতে পারেনি।
কমিলা বেওয়া বললেন, আমার এক ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের মুখেই অস্বাভাবিক লোম। ছেলের শরীরের চেয়ে মেয়ের লোম বেশি। তার উপর মেয়ে শিরিনার মেরুদন্ড বাঁকা এবং কুঁজো থাকায় ঠিকভাবে হাঁটতে পারে না। প্রায় ২৫ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ায় উপার্জন করার মতো মানুষ না থাকায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেঁচে আছি।
জুলেখা আক্তার বললেন, টাকার অভাবে বাবা চিকিৎসা করাতে পারে না। অভাবের কারণে নবম শ্রেণিতে থাকতেই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। মুখে ছেলেদের মতো দাঁড়ি হওয়ায় মানুষ আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে। তখন খুবই কষ্ট হয়। তারা আরও জানান, অবজ্ঞা আর অবহেলার মধ্যে বেঁচে থাকলেও সরকারের দেওয়া কোনো সুযোগ-সুবিধা তারা এখনো পায়নি। শুধু প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে কুঁজোবিশিষ্ট শিরিনাই প্রতিবন্ধী ভাতা পান।
বংশগতভাবে অনেকে মৃত্যুবরণ করলেও বর্তমানে এই তিনটি পরিবারের ১২ জন সদস্যই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। তারা উন্নত চিকিৎসা সহায়তার জন্য সরকারসহ বিত্তবানদের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবির আহমেদ বিপুল মাস্টার ও সাবেক কাউন্সিলর জুলহাস মন্ডল বললেন, আমরা ছোটোকাল থেকেই তাদের লোমযুক্ত দেখে আসছি। তাদের বাপ-দাদারা এমনই ছিলেন। তাদের পেটের ভাত যোগাড় করতেই দিন চলে যায়। অন্যদিকে তারা সমাজে অবজ্ঞা, অবহেলা আর বঞ্চনার মধ্য দিয়েই তাদের দিনাতিপাত চলে।
এ বিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ.এ.এম. আবু তাহের বলেন, এটি হরমোনজনিত এক ধরনের জেনেটিক সমস্যা। যেহেতু এটি বংশানুক্রমিকভাবে হয়, তাই অতিরিক্ত উদ্বেগের কিছু নেই। প্রয়োজন হলে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া সম্ভব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বললেন, ইসলামপুরে লোমশ পরিবার আছে বিষয়টি জানি না। তবে পরিবারগুলো যোগাযোগ করলে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
ইসলামপুর- নিয়ে আরও পড়ুন

গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে নিয়োগের পায়তারা

ইসলামপুরে যমুনার দূর্গম চরাঞ্চল মন্নিয়ার চরে ব্রাকের নতুন শাখা উদ্বোধন

ইসলামপুরে নিস্কাশন ব্যাবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধ ফসলের মাঠ হতাশা কৃষক!

ইসলামপুরে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

ইসলামপুরে বড় পর্দায় সম্প্রচার হলো তারেক রহমানের বিবিসি’র সাক্ষাৎকার
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।