রৌমারীর মুক্তাঞ্চলের স্মৃতি ধরে রাখতে স্মৃতিফলকের দাবী

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

শফিকুল ইসলাম, রৌমারী: কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীর মুক্তাঞ্চলের স্মৃতি ধরে রাখতে স্মৃতিফলকের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি। দীর্ঘ দিন থেকে এই দাবী করে আসলেও কোন স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়নি। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দিয়েছেন এলাকাবাসি।

Demand for memorial plaque to preserve the memory of Roumari's free zone



মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী অঞ্চল ছিল বাংলাদেশের একটি অন্যতম গুরত্বপূর্ণ মুক্তাঞ্চল রৌমারী সদর সহ এর অন্তর্গত চর রাজিবপুর সুফলকুড়ি, সুশাসন, সুন্দরপুর, গাইবান্দা, চিলমারী, উলিপুর, কুড়িগ্রাম প্রভৃতি এলাকা ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় ও সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 


১৯৭১ সালের ৭ই মে থেকে শুরু করে ২০ই মে’র মধ্যে এই এলাকার অধিকাংশ অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়। এখানে স্খানীয় ভাবে রৌমারী নগড় কমিটি গঠন করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। 

এই অঞ্চল ৯ মাস ব্যাপি পাকহানাদার বাহিনীর নিয়স্ত্রণের বাইরে ছিলো এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি পূণাঙ্গ ঘাটিতে পরিণত হয়। প্রায় ৮’শ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে এই মুক্তাঞ্চলের সামরিক প্রশিক্ষণ স্কুলে হাজার হাজার মুক্ত্রিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ লাভ করেন। 

এই এলাকায় স্খানীয় উদ্যোগে রাজস্ব রেশন সরবরাহ, চিকিৎসা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। 

এই মুক্তাঞ্চলের খ্যাতি আন্তর্জাতিক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশী গণমাধ্যমে রৌমারী যুদ্ধকালিন চিত্র নিয়ে তৈরি হয় প্রামাণ্যচিত্র, যার মাধ্যমে (কান্টট্রি মেডি ফোর ডিসাসটার), এবং ডেট লাইন বাংলাদেশ উল্লেখ্য যোগ্য, যা বিশে^র ১০৫ টিরও বেশি দেশে প্রচারিত হয়। 

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম একটি সুসংগঠিত ও সফল মুক্তাঞ্চলের আর কোন নজির নেই। রৌমারী ছিল একমাত্র মুক্তাঞ্চল, যেটি দীর্ঘ ৯ মাস শত্রু মুক্ত থেকে সম্পর্ণ স্বাধীন ভাবে পরিচালিত হয়েছে। এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরত্ব, ত্যাগ এবং নেতৃত্বের পরিচয় মিলে। 


উল্লেখ্য যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দূরদশী নেতৃত্ব ও সাহসিক সিদ্ধান্তর ফলে রৌমারী থানা সদর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে পাকবাহিনীর কবল থেকে সম্পর্ণ ভাবে রক্ষা পেয়েছিল। এটি ছিল বাংলাদেশের একমাত্র থানা সদর, যেখানে দখলদার বাহিনী কখনো প্রবেশ করতে পারেনি। তার সরাসরি নির্দেশে ১৯৭১ সালের ৬ আগষ্ট লেফটেন্যান্ট নুরুন্নবীর অধীনে তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেন্টা কোম্পানী রৌমারীর প্রতিরক্ষা দায়িত্ব গ্রহণ করে। 

মেজর জিয়া নিয়মিত ভাবে রৌমারীর মুক্তাঞ্চল পরিদর্শণ করেন, ১১ আগস্ট থেকে ৫ অক্টোম্বর পর্যন্ত তিনি বহুবার সেখানে যান। ২৮ আগস্ট ১৯৭১, তার উপস্থিতিতেই রৌমারীতে বাংলাদেশের প্রথম বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। 

মুক্তাঞ্চলে দেশের প্রথম সামরিক প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠার পিছনে ও তা সক্রিয় ভুমিকা ছিলো এবং তার পরিকল্পনায় রৌমারীর মাটিতেই গড়ে উঠে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্যান্টনম্যান্ট রৌমারীর প্রতিরক্ষাকে আরো সুদৃঢ় করতে তিনি পর্যায়ক্রমে জেড ফোর্সের তিনটি নিয়মিত ব্যাটালিয়ন সেখানে মোতায়েন করেন। 

সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনায় তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও তত্বাবধান ছিল নিরবিচ্ছন্ন। রৌমারী প্রতিটি দিক তিনি নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সে সময়ে একাধীকবার বলেছেন, রৌমারী এসে স্বাধীনতার স্বাদ পাই। তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও দৃঢ় প্রত্যয়ের ফলেই রৌমারী মুক্তাঞ্চল শত্রæর দখল থেকে চিরকাল মুক্ত ছিল। 

এতদসত্বেও অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজও রৌমারী মুক্তাঞ্চলের এই গৌরবোজ্জল ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য কোন স্থায়ী স্মৃতিফলক বা স্বারক নিমার্ণ করা হয়নি। 

নতুন প্রজন্ম পর্যটক, গবেষক এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আগ্রহী সকলের জন্য এটি একটি অপূরনীয় শুন্যতা তৈরি করেছে। 


উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মো. মশিউর রহমান পলাশ দাবী করে বলেন, রৌমারী উপজেলার কোন উপযুক্ত ও দৃশ্যমান স্থানে যেমন উপজেলা পরিষদ চত্বর, কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ অথবা গুরত্বপূর্ণ কোন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্থানে একটি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিফলক স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে রৌমারীর ইতিহাসকে চিরস্বরণীয় করার উদ্্েযাগ গ্রহণ করা হোক। এতে করে জাতি যেন মুক্তিযুদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে, তেমনি ইতিহাসের গুরত্বপূর্ণ অধ্যায়টি ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।


রৌমারী নিয়ে আরও পড়ুন

রৌমারীতে বিদ্যুৎ-সংযোগই নেই, তবু বিল সাড়ে ৩ হাজার টাকা

রৌমারীতে বিদ্যুৎ-সংযোগই নেই, তবু বিল সাড়ে ৩ হাজার টাকা

রৌমারীতে ভাঙছে ব্রহ্মপুত্র নদ, কাঁদছে মানুষ

রৌমারীতে ভাঙছে ব্রহ্মপুত্র নদ, কাঁদছে মানুষ

রৌমারীতে লিফলেট বিতরণে ব্যস্ত স্টোর কিপার ফারুক আহমেদ

রৌমারীতে লিফলেট বিতরণে ব্যস্ত স্টোর কিপার ফারুক আহমেদ

রৌমারীর জাকের পার্টির জনসভায় মানুষের ঢল

রৌমারীর জাকের পার্টির জনসভায় মানুষের ঢল

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছের সাথে শত্রুতা

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছের সাথে শত্রুতা


সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top