সেবা ডেস্ক: গাজায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত চুক্তির ফলে গাজার আকাশে বোমারু বিমানের পরিবর্তে শান্তির আশা নেচে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই যুদ্ধবিরতি কি ফিলিস্তিনের জন্য বিশ্ব স্বীকৃতির দ্বার উন্মোচন করতে পেরেছে? নাকি বিধ্বস্ত ভূখণ্ড ও লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত এই অস্থায়ী শান্তি বরং তাদের বিশ্ব মঞ্চে আরও একধাপ পিছিয়ে দিয়েছে? সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বিশ্বের একাধিক দেশের স্বীকৃতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের অবস্থান যেন এক দ্বন্দ্বের মধ্যে আবদ্ধ।
![]() |
গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও ফিলিস্তিন বিশ্ব স্বীকৃতির পথে কতটা পিছিয়ে? : এআই ছবি |
গত কয়েক সপ্তাহে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার হিড়িক পড়েছে পশ্চিমা বিশ্বে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগালের পর ফ্রান্স, অ্যান্ডোরা, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও মোনাকো—একে একে প্রায় সব ইউরোপীয় শক্তিধর দেশই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে এখন চারটি—চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য—ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই এখনও তা থেকে বিরত রয়েছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে এই কূটনৈতিক জয়কে অনেকেই ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে দেখছেন। ইতালির রাস্তায় লাখো মানুষের বিক্ষোভ, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনমত ও সরকারি সিদ্ধান্ত—সবই যেন ফিলিস্তিনের পক্ষে এক বৈশ্বিক সংহতির প্রমাণ।
কিন্তু এই স্বীকৃতির বাস্তব প্রভাব কতটুকু? বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্বীকৃতি বেশিরভাগই প্রতীকী। কারণ, একদিকে যেমন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে, অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলের হামলা ও জাতিগত নিধনের মতো মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ার পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩৭ ফিলিস্তিনি। এটা প্রমাণ করে যে, কূটনৈতিক স্বীকৃতির ঢেউ সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে অনেকেই ‘শান্তির প্রথম ধাপ’ বলে উল্লেখ করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই চুক্তিকে সামনে এনেছেন। কিন্তু চুক্তির বাস্তবতা কি? এই চুক্তির ফলে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে, জিম্মিদের মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে, এবং সামান্য হলেও ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি মিলেছে। কিন্তু এই চুক্তি কি ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে পেরেছে? নাকি এটি শুধুই একটি কৌশলগত বিরতি, যার মাধ্যমে ইসরায়েল তার সামরিক অবস্থান দৃঢ় করার সুযোগ পাচ্ছে?
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপের ফসল। ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের কূটনৈতিক সাফল্য তুলে ধরতে চায়। কিন্তু এই চুক্তির মধ্যে ফিলিস্তিনের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ—যেমন পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধ করা, এবং শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার অধিকার—এসবের কোনো স্পষ্ট সমাধান নেই। ফলে, যুদ্ধবিরতি যতই দীর্ঘস্থায়ী হোক না কেন, তা ফিলিস্তিনের মৌলিক অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে।
গাজায় দুই বছরের যুদ্ধে যা ধ্বংসস্তূপ সৃষ্টি হয়েছে, তা ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আর প্�ায়ে দেড় লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের বাসস্থান, স্কুল, হাসপাতাল—সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধবিরতির পর মানুষ যখন বিধ্বস্ত ঘরবাড়িতে ফিরছে, তখন তাদের সামনে মৌলিক চ্যালেঞ্জ হলো—খাবার, পানি, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের স্বীকৃতি কি তাদের জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে?
আরও পড়ুন:
ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ব স্বীকৃতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার চেয়ে বড় প্রয়োজন হলো ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা। গাজায় ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার শুরু হলেও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড খণ্ডিত হয়ে পড়ছে, আর এই খণ্ডিত ভূখণ্ড নিয়ে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ওফার ব্রনসটাইন সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল যদি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে রাখে, তাহলে ফ্রান্স ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এই হুঁশিয়ারি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি নিয়ে বিশ্ব মতামত দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে ইউরোপ ও আরব বিশ্ব ফিলিস্তিনের পক্ষে কূটনৈতিক সমর্থন জানাচ্ছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই স্বীকৃতিকে ‘হামাসকে পুরস্কৃত করা’ বলে অভিহিত করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘে বলেছেন, জাতিসংঘের প্রতিটি সিদ্ধান্তই যেন ‘ফাঁকা বুলি’, যার কোনো বাস্তব প্রয়োগ নেই। এই মন্তব্য বিশ্ব স্বীকৃতির প্রকৃত মূল্যায়ন করে।
ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ব স্বীকৃতি অবশ্যই একটি কূটনৈতিক জয়, কিন্তু এই জয় যদি ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে তা তো বেশিরভাগই প্রতীকী থেকে যায়। গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনিরা যখন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ফিরছে, তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগছে—এই বিশ্ব স্বীকৃতি কি তাদের জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে? নাকি তারা আরও একবার বিশ্বের কাছে পরাজিত হলো?
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনের বিশ্ব স্বীকৃতি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন এক নতুন এবং ভয়াবহ মাত্রা লাভ করে। এই সংঘাত, যা বিগত দুই বছর ধরে অব্যাহত ছিল, কেবল অসংখ্য প্রাণহানি আর ধ্বংসযজ্ঞই ঘটায়নি, বরং বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিন সমস্যার প্রতি নতুন করে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
আরও পড়ুন
এই সময়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ সমান্তরালভাবে ঘটে, যা ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গভীর প্রভাব ফেলে। প্রথমত, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি অভূতপূর্ব জোয়ার আসে, যেখানে প্রভাবশালী ইউরোপীয় ও পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বের অধিকারকে স্বীকার করে নেয়।
দ্বিতীয়ত, এর মাত্র এক মাস পর, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই দুটি ঘটনা, যদিও ভিন্ন প্রকৃতির এবং ভিন্ন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তবুও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের রাজনৈতিক ও মানবিক প্রেক্ষাপটে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই পরিস্থিতিতে একটি মৌলিক প্রশ্ন সামনে আসে: গাজায় এই যুদ্ধবিরতি কি ফিলিস্তিনের বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জনের প্রক্রিয়াকে মন্থর করেছে, নাকি এটি আন্তর্জাতিক সমর্থনকে আরও জোরদার করেছে এবং ফিলিস্তিন সমস্যার একটি দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই সমাধানের পথ প্রশস্ত করার সুযোগ তৈরি করেছে? বর্তমান বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট হয় যে, যুদ্ধবিরতির ফলে ফিলিস্তিনের বিশ্ব স্বীকৃতি পিছিয়ে যায়নি, বরং যুদ্ধবিরতির পূর্বেই ফিলিস্তিন অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করেছে, যা চলমান সংঘাতের মধ্যেও ফিলিস্তিনিদের নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
যুদ্ধবিরতির পূর্বে ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভূতপূর্ব জোয়ার
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস ছিল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী অধ্যায়। বিগত দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান, যা জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে ভয়াবহ গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনযজ্ঞে পরিণত হয়েছিল, বিশ্ব জনমতকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
৬৭,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে অসংখ্য নারী ও শিশু ছিল, এই সংঘাতে প্রাণ হারান। অবকাঠামোগত ধ্বংসযজ্ঞ এবং খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবার তীব্র অভাব এক ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করে। এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি এবং সমর্থন তুঙ্গে ওঠে, যার ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জোরালো দাবি ওঠে।
এই সময়ে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পর্তুগালের মতো গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর পরপরই ফ্রান্সের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, যা কূটনৈতিক মহলে এক গভীর তাৎপর্য বহন করে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর ইসরায়েল-ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ দূত ওফার ব্রনসটাইন খোলাখুলিভাবে জানান যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আরও অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে চারটিকেই (যুক্তরাষ্ট্র বাদে) ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বকে স্বীকার করে নেওয়ার কাতারে নিয়ে আসে।
বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মোনাকো এবং অ্যান্ডোরার মতো ইউরোপীয় দেশগুলোও একই সময়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, যা এই অঞ্চলের একটি সামগ্রিক প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।
আরও পড়ুন:
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সাল নাগাদ, জাতিসংঘের মোট ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৫৭টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এই সংখ্যা বিশ্বব্যাপী মোট সদস্য দেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি, যা ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রত্বের দাবির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমর্থনকে তুলে ধরে। এই স্বীকৃতিগুলি কেবল একটি প্রতীকী পদক্ষেপ ছিল না, বরং ফিলিস্তিনের জন্য এটি ছিল একটি শক্তিশালী নৈতিক ও রাজনৈতিক বিজয়।
এটি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ঐকমত্যকে আরও দৃঢ় করে তোলে এবং ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করে।
মাদ্রিদ, রোম এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রধান শহরগুলিতে লাখ লাখ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ, যেখানে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়, তা এই গণদাবির একটি শক্তিশালী প্রতিফলন ছিল এবং সরকারগুলোকে ফিলিস্তিনের পক্ষে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে। এই জোয়ার ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের দখলদারিত্ব এবং অস্বীকৃতি নীতির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এক ঐতিহাসিক জনমত তৈরি করে।
গাজা যুদ্ধবিরতি: একটি কূটনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি
ফিলিস্তিনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই অক্টোবর মাসে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এই যুদ্ধবিরতিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা 'শান্তি পরিকল্পনা'র প্রথম ধাপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর এবং তুরস্কের মতো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফসল, যার ফলস্বরূপ মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে দীর্ঘ এবং জটিল আলোচনার পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলোর মধ্যে ছিল:
১. ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে। এই নির্দিষ্টতা ইসরায়েলের গাজায় সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না হয়ে কেবল কৌশলগতভাবে পিছিয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়।
২. ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পরপরই, হামাস গাজায় বন্দী থাকা জীবিত সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেবে।
৩. এর বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। ফিলিস্তিনি বন্দীদের তালিকা এবং তাদের মুক্তি প্রক্রিয়া ছিল আলোচনার একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল দিক।
এই যুদ্ধবিরতি দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের অবসানে একটি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি ৬৭,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পর প্রথম কার্যকর যুদ্ধবিরতি ছিল, যা গাজার বিধ্বস্ত জনগণের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসে।
তবে, এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অতি ডানপন্থী জোটসঙ্গীরা, বিশেষ করে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির, এই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা হুমকি দেন যে, হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না করা হলে তারা জোট থেকে বেরিয়ে সরকার পতন ঘটাবেন।
এটি নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের ভঙ্গুরতা এবং ইসরায়েলি সমাজের মধ্যে ফিলিস্তিন নীতির বিষয়ে গভীর বিভাজনকে তুলে ধরে। অন্যদিকে, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে যে, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর তারা সেসব এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করবে, যা ইসরায়েলের জন্য নতুন করে উসকানি এবং ভবিষ্যৎ সংঘাতের কারণ হতে পারে। এই পদক্ষেপ গাজার শাসনভার এবং নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জটিল প্রশ্ন তৈরি করে।
যুদ্ধবিরতি ও স্বীকৃতির সম্পর্ক: একটি গভীর বিশ্লেষণ
পর্যবেক্ষণ ও তথ্য বিশ্লেষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের প্রক্রিয়া গাজায় যুদ্ধবিরতির কারণে কেবল পিছিয়ে যায়নি, বরং স্বীকৃতিগুলোর বেশিরভাগ যুদ্ধবিরতির পূর্বেই অর্জিত হয়েছে। এই স্বীকৃতিগুলো ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসন, গাজায় সৃষ্ট ভয়াবহ মানবিক সংকট এবং বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ফল।
যুদ্ধবিরতি মূলত একটি নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক এবং মানবিক চুক্তি ছিল, যার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় সামরিক সহিংসতা কমানো। এটি ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি বা দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের চূড়ান্ত রূপ ছিল না।
বরং, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিগুলি ছিল ফিলিস্তিনিদের প্রতি একটি শক্তিশালী নৈতিক ও রাজনৈতিক বার্তা, যা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক ফোরামে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে এবং ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রত্বের দাবিকে আরও বৈধতা দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন, যদিও যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিল, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে স্পষ্টভাবে অস্বীকৃতি জানায়। ট্রাম্প ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়াকে হামাসকে 'পুরস্কৃত করা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিন নীতি এবং ইসরায়েলের প্রতি তাদের নিরঙ্কুশ সমর্থনের প্রতিফলন।
এই অবস্থান অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিপরীতে ছিল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের স্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং এমনকি পশ্চিম তীরের কিছু অংশ ইসরায়েলের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। এই পদক্ষেপটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করার একটি সুস্পষ্ট চেষ্টা ছিল, যা প্রমাণ করে যে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক জনমত এবং ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি সত্ত্বেও দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি তার বিরোধিতায় অটল।
ফিলিস্তিনের নৈতিক বিজয় এবং ইসরায়েলের বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্নতা
একটি বিশ্লেষণমূলক কলামে অত্যন্ত জোরালোভাবে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, এই সামগ্রিক পরিস্থিতিতে হামাস তাদের মূল লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে: ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় ফিরিয়ে আনা এবং বিশ্বে তার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া। যেখানে আরব বিশ্বের কিছু শাসক এবং বিশ্বনেতারা একসময় ফিলিস্তিন সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার বা মুছে ফেলার চিন্তা করছিল, সেখানে দুই বছর পর জায়োনিবাদের জন্মদাতারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। ইসরায়েল যেখানে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল, সেখানে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন ফিলিস্তিনের নামে স্লোগান দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন তার নৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল এবং জায়োনিজম বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্বভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের কারণে ইসরায়েল একটি 'গণহত্যাবাদী রাষ্ট্র' হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে। এর ফলে ইসরায়েলিরা বিশ্বের চোখে নৃশংস ও অমানবিক হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে। এই বিচ্ছিন্নতা কেবল কূটনৈতিক বা রাজনৈতিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাবও দেখা গেছে। ইসরায়েলি স্টার্টআপে বিনিয়োগের পরিমাণ ৯০ শতাংশ কমে গেছে, যা ইসরায়েলি অর্থনীতির ওপর আন্তর্জাতিক আস্থার অভাবকে নির্দেশ করে। বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলি পর্যটকদের আক্রমণের শিকার হতে দেখা গেছে, যা বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবের ব্যক্তিগত স্তরের প্রভাবকে তুলে ধরে।
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক – সকল দিক থেকে ইসরায়েল বর্তমানে একটি বিচ্ছিন্ন এবং সমালোচিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ন্যারেটিভও ইসরায়েলের 'আত্মরক্ষার অধিকার' থেকে সরে এসে গাজায় মানবিক বিপর্যয়, গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনের দিকে মোড় নিয়েছে।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ এবং সামনের পথ
যুদ্ধবিরতি যদিও গাজায় তাৎক্ষণিক সহিংসতা বন্ধ করে কিছুটা স্বস্তি এনেছে, তবে এর পরবর্তী ধাপগুলিতে ফিলিস্তিনিদের জন্য বড় এবং জটিল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো গাজার পুনর্গঠন। দুই বছরের ভয়াবহ আগ্রাসনে গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো, বাড়িঘর, হাসপাতাল, স্কুল এবং জরুরি পরিষেবা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এই বিপুল ধ্বংসযজ্ঞের পুনর্গঠনে শত শত বিলিয়ন ডলার এবং দীর্ঘ সময় লাগবে। কে এই পুনর্গঠনের তহবিল জোগাবে এবং কে এর তদারকি করবে, তা একটি জটিল প্রশ্ন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা। ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘদিনের গভীর বিভেদ বিদ্যমান। একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ, বৈধ এবং কার্যকর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা অপরিহার্য, যা গাজার শাসনভার পরিচালনা করতে এবং সকল ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (PA) দুর্বলতা এবং জনগণের আস্থার সংকটের কারণে একটি নতুন ও ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নিশ্চিত করা যেকোনো টেকসই সমাধানের জন্য জরুরি।
গাজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও গভীর উদ্বেগ রয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর সেসব এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে, যা ইসরায়েলের সাথে নতুন করে সংঘর্ষের জন্ম দিতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় গাজায় নিরাপত্তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে হামাস ও ইসরায়েলের ঐকমত্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন, বাহিনীর ম্যান্ডেট, গঠন এবং অর্থায়নের ওপর। কে গাজার সীমান্ত, আকাশসীমা এবং সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়েও জটিল প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এছাড়া, পশ্চিম তীরের পরিস্থিতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যালেস্টেনিয়ান লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য হানান আশরাউই যথার্থই মন্তব্য করেছেন যে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের পরই 'আসল চ্যালেঞ্জগুলো' শুরু হবে। তিনি ফিলিস্তিনিদের ঐক্য এবং ইসরায়েলি দখলদারিত্ব বন্ধের দিকে নজর দিতে আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন এবং সামরিক অভিযান পশ্চিম তীরকেও ক্রমাগত লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে, যা দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও কঠিন করে তুলছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা যুদ্ধবিরতি পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেবল সহিংসতা বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়; দখলদারিত্বের অবসান, ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের জন্য ক্রমাগত কূটনৈতিক চাপ বজায় রাখা অপরিহার্য। আঞ্চলিক শক্তিগুলোর (যেমন মিসর, কাতার, তুরস্ক এবং সৌদি আরব) মধ্যস্থতা, পুনর্গঠন এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
গাজায় ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসের যুদ্ধবিরতির ফলে ফিলিস্তিনের বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জনের প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়নি। বরং, এই যুদ্ধবিরতির পূর্বেই, সেপ্টেম্বরে, ফিলিস্তিন বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।
এই স্বীকৃতিগুলো ছিল ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসন এবং ভয়াবহ মানবিক সংকটের প্রত্যক্ষ ফল, যা ফিলিস্তিনিদের নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানকে বিশ্বমঞ্চে সুদৃঢ় করেছে।
যুদ্ধবিরতি ছিল একটি তাৎক্ষণিক মানবিক ও নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক পদক্ষেপ, যার উদ্দেশ্য ছিল সহিংসতা বন্ধ করা এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া। এটি ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বের অধিকারকে অস্বীকার করে না, বরং এর পূর্ববর্তী ব্যাপক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বের দাবির প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থনকে নতুন গতি দিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে: ইসরায়েল তার সামরিক শক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ করেও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিন তার রাষ্ট্রত্বের দাবির প্রতি বিশ্বব্যাপী সহানুভূতি এবং নৈতিক সমর্থন অর্জন করেছে। এই যুদ্ধবিরতি কেবল একটি সাময়িক বিরতি, যা ফিলিস্তিন সমস্যার মূল কারণ – দখলদারিত্ব, সার্বভৌমত্বের অভাব এবং ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতি – সমাধান করে না। ফিলিস্তিনিদের ঐক্য, গাজার পুনর্গঠন এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান নিশ্চিত করাই ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ। প্রকৃত এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি কেবল তখনই সম্ভব হবে যখন ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকৃত হবে এবং দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের একটি কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পথ তৈরি হবে। এই যুদ্ধবিরতি হয়তো সেই পথের একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ, কিন্তু সামনের পথটি এখনও জটিলতা, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগে পরিপূর্ণ।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বিশ্বের একাধিক দেশের স্বীকৃতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের অবস্থান যেন এক দ্বন্দ্বের মধ্যে আবদ্ধ। একদিকে কূটনৈতিক স্বীকৃতির ঢেউ, অন্যদিকে ভূখণ্ডের ধ্বংসস্তূপ ও নিরাপত্তাহীনতা। এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন কি বিশ্ব স্বীকৃতির পথে এগিয়ে গেল, নাকি পিছিয়ে পড়ল? উত্তর হলো—ফিলিস্তিন বিশ্ব স্বীকৃতির পথে অগ্রসর হলেও ভূখণ্ডের বাস্তবতায় পিছিয়ে পড়েছে। কারণ, বিশ্ব স্বীকৃতি যদি ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে তা তো বেশিরভাগই প্রতীকী থেকে যায়। ফিলিস্তিনের জন্য এই স্বীকৃতির চেয়ে বড় প্রয়োজন হলো ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকার। যতদিন সেটি নিশ্চিত না হবে, ততদিন ফিলিস্তিন বিশ্ব স্বীকৃতির পথে এগিয়ে গেলেও তাদের জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। বরং তারা বিশ্বের কাছে আরও একবার পরাজিত হবে।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
বিশ্ব- নিয়ে আরও পড়ুন

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্ত শহিদুল আলম এখন তুরস্কে

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের প্রতিবাদে ওয়াকআউট, ফাঁকা হয়ে গেল অধিবেশন কক্ষ

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল আরও চার দেশ, বাংলাদেশ দিয়েছিল ১৯৮৮ সালে

কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি: আন্তর্জাতিক চাপে নতুন মোড়

নেপালের আন্দোলন: যেখান থেকে শিখতে পারে বাংলাদেশ!
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।