নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে।
![]() |
| ভেন্টিলেশনে খালেদা জিয়া: অবস্থা সংকটাপন্ন, চলছে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই।। ছবি: বাসস |
শ্বাসকষ্ট তীব্র আকার ধারণ করায় এবং শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকভাবে কাজ না করায় তাঁকে ‘ইলেক্টিভ ভেন্টিলেশন’ বা কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থার সহায়তায় রাখা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত সংকটাপন্ন এবং তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহাবউদ্দিন তালুকদার স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার সর্বশেষ চিকিৎসা আপডেটের ওপর ভিত্তি করে এই তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তিন বাহিনী প্রধান

খুবই ‘ক্রিটিক্যাল’ অবস্থায় খালেদা জিয়া: যুক্ত হলেন চীনা চিকিৎসকরা, ভরসা এখন শুধুই আল্লাহ
মেডিকেল বোর্ডের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার ফুসফুসের কার্যক্ষমতা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসকরা প্রথমে তাঁকে হাইফ্লো নাজাল ক্যানোলা এবং পরবর্তীতে বাইপ্যাপ (BiPAP) মেশিনের মাধ্যমে অক্সিজেন সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এসব পদক্ষেপে তাঁর শারীরিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড দ্রুত বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শেষ পর্যন্ত তাঁর ফুসফুস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে বিশ্রাম দেওয়ার লক্ষ্যে তাঁকে ‘ইলেক্টিভ ভেন্টিলেটর সাপোর্টে’ নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতার এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর কিডনি বা বৃক্কের কার্যক্ষমতা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে তাঁর জীবন বাঁচাতে নিয়মিত ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়েছে এবং তা এখনো চলমান। এর পাশাপাশি তাঁর পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি ‘ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন’ (ডিআইসি) নামক এক জটিল রক্তরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যার ফলে তাঁকে নিয়মিত রক্ত এবং রক্তের বিভিন্ন উপাদান (যেমন- প্লাজমা, প্লেটলেট) ট্রান্সফিউশন করতে হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রের সমস্যাও নতুন করে প্রকট হয়েছে। নিয়মিত ইকোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষায় তাঁর হার্টের অ্যাওর্টিক ভালভে সমস্যা ধরা পড়ে। পরবর্তীতে ‘ট্রান্সইসফেজিয়াল ইকোকার্ডিওগ্রাম’ (টিইই) পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনি ‘ইনফেকটিভ অ্যানডোকার্ডাইটিস’-এ ভুগছেন। এটি হৃৎপিণ্ডের ভালভ বা প্রকোষ্ঠের আস্তরণের একটি গুরুতর সংক্রমণ। আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসরণ করে এর চিকিৎসা পরিচালনা করছেন বোর্ডের সদস্যরা।
এছাড়া গত ২৭ নভেম্বর পরীক্ষায় তাঁর ‘অ্যাকিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস’ বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ ধরা পড়ে, যার চিকিৎসা এখনো অব্যাহত রয়েছে। চিকিৎসকরা আরও জানান, তাঁর শরীরে গুরুতর ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাল (ছত্রাকজনিত) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তাঁকে অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন শাখার অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার পাশে রয়েছে। তাঁরা প্রতি মুহূর্তে রোগীর শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রটোকল পরিবর্তন করছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাঁরা বলেন, এই সংকটময় মুহূর্তে দয়া করে কেউ ভুল বা যাচাইবিহীন তথ্য ছড়াবেন না। মেডিকেল বোর্ডের ওপর আস্থা রাখুন এবং রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন। গুলশানের বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মাসের শেষের দিকে তাঁর শ্বাসকষ্ট, কাশি ও জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ অবস্থায় গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই তাঁর ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও কিডনির অবস্থার তীব্র অবনতি ধরা পড়ে। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে তাঁকে সাধারণ কেবিন থেকে সরিয়ে দ্রুত করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই ভেন্টিলেশন সাপোর্টে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
সমগ্র দেশবাসী এবং দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর সুস্থতার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন। চিকিৎসকরাও তাঁদের সাধ্যমতো সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিককে সুস্থ করে তোলার জন্য।
সূত্র: বাসস/সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
জাতীয়- নিয়ে আরও পড়ুন

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট

আজ সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা

আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা

তফসিল ঘোষণার ঠিক আগেই পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ

প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য বড় দুঃসংবাদ: শীতকালীন ছুটি বাতিল, চলবে বার্ষিক পরীক্ষা


খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।