লিয়াকত হোসাইন লায়ন: দিন দিন কমছে জামালপুরের ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেঞ্চ ফাঁকা পড়ে থাকলেও প্রি ক্যাডেট,মাদরাসার শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীরা উপচে পড়া ভিড়ে বসে পাঠ নিচ্ছে।
![]() |
| ইসলামপুরে শিক্ষার বেহাল দশা! প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাঁকা |
শিক্ষাক্রমে আস্থাহীনতা এবং শিক্ষকদের হোম ভিজিট সহ দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে স্কুল থেকে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে মাদরাসা ও কেজি স্কুলে দিনদিন শিক্ষার্থী উপচে পরছে।
শিক্ষার্থী টানা অনুপস্থিতে শিক্ষকদের খোঁজ না রাখা, প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান, অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকদের যোগাযোগ না থাকায়সহ প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের কর্তব্যে চরম অবহেলা ও উদাসীনতাকে দায়ী করছে অভিভাবকরা।
![]() |
| ইসলামপুরে শিক্ষার বেহাল দশা! প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাঁকা |
দু’টি নদনদী দ্বারা তিন ভাগে বিভক্ত উপজেলার যমুনার দূর্গম চরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের বিদ্যালয় গুলোতে প্রশিক্ষণ হীন অনভিজ্ঞ প্রক্সি শিক্ষক-দ্বারা পাঠ্যদান করায় শিক্ষার গুনগত মান নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পাঠদানে কাঙ্খিত পাঠ্য গ্রহণ, পাশাপাশি সঠিক পাঠ্য কারিকুলাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষুদে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নগন্য,সারি সারি বেঞ্চ ফাঁকা পড়ে রয়েছে উপস্থিতি হতাশা জনক।
উপজেলার যমুনার দূর্গম চরাঞ্চলের দিঘাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬৫ শিক্ষার্থীর স্থলে ৬জন, উত্তর দিঘাইর সপ্রাবি ৯৭জন শিক্ষার্থীর স্থলে ৪জন, দক্ষিন বরুল সপ্রাবি ১৪২ জন শিক্ষার্থীর স্থলে ৭জন, জিগাতলা সপ্রাবি তে ১৪০জনের স্থলে ৬জন, চর বরুল, চর দিঘাইর, সাপধরী,চেঙ্গানীয়া, কাশারী ডোবা, চর নন্দনের পাড়, সিন্দুরতলী বিদ্যালয় গুলোতে গিয়ে হাতে গোনা দুই-তিনজন শিক্ষার্থী থাকলেও প্রক্সি শিক্ষক দ্বারা পাঠদান, শিক্ষকদের নিয়মিত না আসার অভিযোগ রয়েছে।
![]() |
| ইসলামপুরে শিক্ষার বেহাল দশা! প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাঁকা |
এছাড়াও চর শিশুয়া, উত্তর জোরডোবা, শিলদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী শুন্য তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে।
পূর্বাঞ্চলের পূর্ব পোড়ার চর সপ্রাবিতে ৮৯শিক্ষার্থীর স্থলে ৪জন, হাসান পুর ৮৯ শিক্ষার্থীর স্থলে ৬জন, নান্দেকুড়া মন্ডলবাড়ী, সভারচর, দক্ষিন মোহাম্মদপুর, সাজলের চর প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে দুই থেকে তিনজন শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকলেও হরিণধরা সপ্রাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী শুন্য ও মোহাম্মদপুর বালুচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে দুইজন শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার্থী শুন্য দেখা গেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ১৭৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৫টি কেজি স্কুল ও জাতীয়করণ প্রস্তাবিত ৯৮টি এবতেদায়ী মাদরাসা ও ২৫টির মত কওমি মাদরাসা রয়েছে।
![]() |
| ইসলামপুরে শিক্ষার বেহাল দশা! প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাঁকা |
দূর্গম যমুনার চর জিগাতলার রাশেদুজ্জামান বলেন, শিক্ষকরা মাসে এক দুই বার আসে। বিদ্যালয়ে কোন লেখাপড়া হয় না। আমাদের এই চর জিগাতলা থেকে শিলদহ পর্যন্ত প্রক্সি শিক্ষক দিয়েই চলে। কত বিদ্যালয়ে প্রক্সি শিক্ষকও নেই শিক্ষকও তেমন আসেন না। অভিভাবক হীন হয়ে পরেছে যমুনার চরের বিদ্যালয় গুলো।
দূর্গম যমুনার চরের আজিজ মিয়া বলেন, আমার বুঝ হইছে নাগাদে দেখছি চরাঞ্চলে বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষকদের দ্বায়িত্বহীনতা। তেমন কোন নজর নেই উর্ধ্বতন শিক্ষা কর্মকর্তাদের। অনেক অভিযোগ দিয়েছি কোন কাজ হয়নি। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান পরিচালনা করছেন শিক্ষকরা। উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করে শিক্ষকরা শুধু বেতন ভাতাদি তুলেন নিয়মিত ।
![]() |
| ইসলামপুরে শিক্ষার বেহাল দশা! প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাঁকা |
স্থানীয়রা আরো জানান- যমুনার চরের অন্যান্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো একই অবস্থা। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে দ্বায় সাড়তে আসেন। করোনার পর থেকে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। দিন দিন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চরাঞ্চলের কোমলমতি শিশুরা।
পূর্বাঞ্চলের অভিভাবক এরশাদ আলী বলেন-উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চরম ভাবে ভেঙ্গে পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন ও হতাশা। পূর্বাঞ্চলের রাস্তাঘাট উন্নত হওয়ায় ভাল লেখাপড়ার জন্য সদরে কে জি স্কুলে সন্তানকে পড়াতে হচ্ছে। শিক্ষার এই অবহেলা থেকে পরিত্রান পেতে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
![]() |
| প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাঁকা: কিন্ডারগার্টেন ও মাদরাসায় উপচে পড়ছে শিক্ষার্থী |
এদিকে, শিক্ষকরা যমুনা চরের স্কুল নৌকায় যাতায়াত মাঝে মাঝে একটু সমস্যা হয় বলে জানান।এছাড়াও প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন নূরানী ও এবতেদায়ী মাদরাসা স্থাপিত হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ার কারণ বলেও উল্লেখ করেন।
দীঘাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান জানান, একদিকে নদী ভাঙ্গন, অন্যদিকে অভিভাবকরা অসচেতন। পাশাপাশি দুই পার্শেই দুইটি মাদরাসা হওয়ায় উপস্থিতি কমে গেছে।
![]() |
| প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাঁকা: কিন্ডারগার্টেন ও মাদরাসায় উপচে পড়ছে শিক্ষার্থী |
সহকারী শিক্ষক ইউসুফ আলী জানান-অভিভাবকদের চাহিদা কম। তারা বাড়িতেই কাজ করান স্কুলে পাঠান না। কারণ হিসাবে তিনি পাশের মাদরাসাগুলোকে দায়ী করেন।
নজরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, প্রাইমারী স্কুলে এখন তেমন লেখাপড়া হয়না। স্কুলে ছাত্র একটানা কয়েক দিন অনুপস্থিত থাকলেও শিক্ষকরা খোঁজ নেয় না। অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের কোনো যোগাযোগ নেই।
মাওলানা আঃ খালেক বলেন-আরবী শিক্ষার প্রতি সকলেও আগ্রহ রয়েছে। আগ্রহ থেকেই দিনদিন এ শিক্ষা নিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
![]() |
| প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাঁকা: কিন্ডারগার্টেন ও মাদরাসায় উপচে পড়ছে শিক্ষার্থী |
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা বেগম বলেন, শিক্ষার্থী আগের তুলনায় এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও বিদ্যালয় গুলো প্রতি নিয়তই মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে প্রক্সি শিক্ষকের বিষয়ে আমার জানা নেই। এ ধরনের কাজ কোন বিদ্যালয় করলে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
ইসলামপুর- নিয়ে আরও পড়ুন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামপুরে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা

ইসলামপুরে দিনদিন বেড়েই চলেছে বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রতিদিন ৭ তালাক

ইসলামপুরে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীর উঠান বৈঠক

ইসলামপুরে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ

ইসলামপুরে চোরের উপদ্রুপে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী


.webp)
.jpg)
.webp)
.jpg)
.webp)
.webp)
.webp)
.webp)
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।