সেবা ডেস্ক: আজ ২৮ অক্টোবর, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী।
![]() |
| গভীর শ্রদ্ধায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী |
এই দিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছে সেই অকুতোভয় বীরকে, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে রচনা করেছিলেন এক অবিস্মরণীয় বীরত্বের অধ্যায়। তাঁর আত্মত্যাগ, সাহস ও দেশপ্রেম চিরকাল আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
জন্ম ও সামরিক জীবনে যোগদান
বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ হামিদুর রহমান ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খোর্দ খালিশপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ৭ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে কৈশোরেই তাঁকে মুজাহিদ বাহিনীতে ভর্তি হতে হয়। তবে যশোরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মহড়া দেখে সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রবল আগ্রহ জন্ম নেয় তাঁর মনে। সেই আগ্রহ থেকেই ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের রিক্রুটিং টিমে যোগ দেন এবং প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রামের ইবিআরসিতে প্রশিক্ষণে যোগ দেন। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে হামিদুরসহ কিছু রিক্রুট ইবিআরসি থেকে বের হয়ে প্রথমে নিজ বাড়ি ও পরে যশোরের চৌগাছায় অবস্থানরত ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের তীব্র আগ্রহের কারণে তিনি নিয়মিত সৈনিক হিসেবে গৃহীত হন (সৈনিক নম্বর: ৩৯৪৩০১৪)। পরবর্তীতে তাঁর সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও কর্মোদ্যমের জন্য তাঁকে কোম্পানি কমান্ডারের রানার হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
ঐতিহাসিক ধলই যুদ্ধ ও শাহাদাত
সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের শেষ যুদ্ধ ছিল ঐতিহাসিক ধলই যুদ্ধ। সিলেট জেলার (তৎকালীন) শ্রীমঙ্গল থানার প্রায় ১০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ধলই সীমান্ত আউটপোস্ট (বিওপি) দখলের দায়িত্ব দেওয়া হয় ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের 'সি' কোম্পানিকে। ধলই বিওপিতে শত্রুর অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং প্রতিরক্ষামূলক ছিল—কংক্রিটের বাংকারে অটোমেটিক অস্ত্র ও সম্মুখভাগে পাঞ্জি ও মাইন পোঁতা ছিল।
২৮ অক্টোবর ভোররাতে মূল আক্রমণ শুরু হয়। তীব্র আর্টিলারি ফায়ারের আড়ালে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর খুব কাছাকাছি পৌঁছেও পাকিস্তানি বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন। ফোর্স হেডকোয়ার্টার থেকে ধলই দখলের কঠোর নির্দেশ আসার পর মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু একটি এলএমজির অবিরাম গুলিবর্ষণ তাঁদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে।
ঠিক এই সংকটময় মুহূর্তে কোম্পানি অধিনায়ক ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের নির্দেশে নির্ভীকযোদ্ধা সিপাহী হামিদুর রহমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্রলিং করে এলএমজি পোস্টের দিকে এগিয়ে যান। একটি চা-বাগানের সেচের খালের মধ্য দিয়ে একেবারে নিকটে পৌঁছে তিনি বীরবিক্রমে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি দুজন পাকিস্তানি সৈন্যের সাথে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হন, তাদের ঘায়েল করেন এবং এলএমজি বাংকারে গ্রেনেড ছুড়ে সেটি নিষ্ক্রিয় করেন। এই অসম সাহসিকতার ফলস্বরূপ মুক্তিসেনারা ঝড়ের গতিতে ধলই ঘাঁটিতে প্রবেশ করে।
এলএমজি পোস্টের পাশেই সিপাহী হামিদুর রহমানের মৃতদেহ পাওয়া যায়, তাঁর পাশেই ছিল দুজন পাকিস্তানি সৈন্যের মৃতদেহ। তাঁর আত্মত্যাগের কারণেই ১ ইস্ট বেঙ্গল ধলই বাগান ও পত্রখোলা চা-বাগানের অংশবিশেষ দখল করতে সক্ষম হয়। একটানা সাত দিনের যুদ্ধের পর ৩ নভেম্বর ধলই বিওপি সম্পূর্ণভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও চিরন্তন প্রেরণা
ধলই বিওপি দখলে শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের কৃতিত্ব ও অবদান অবিস্মরণীয়। নিজের জীবন বিপন্ন ও শেষ পর্যন্ত উৎসর্গ করে তিনি সহযোদ্ধাদের জন্য বিজয়ের পথ সুগম করে দিয়েছিলেন। তাঁর এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ-এ ভূষিত করে।
শাহাদাতের পর সহযোদ্ধারা এই বীরের মরদেহ ভারতের আম্বাসা গ্রামে দাফন করেছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিভিন্ন পক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে পুনরায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ দায়িত্ববোধের যে অনন্যসাধারণ উদাহরণ বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান স্থাপন করেছেন, তা তাঁকে একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসেবে অমর করে রেখেছে। সিপাহী হামিদুর রহমান নামটি তাই সকল দেশপ্রেমিকের মনে চিরন্তন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
জাতীয়- নিয়ে আরও পড়ুন

সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অংশ হচ্ছে? বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা “অদৃশ্য বিপদ” নিয়ে!

৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে শাহজালাল বিমানবন্দরের আগুন, ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো এরিয়ায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে বিমান বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে, একজন পলাতক: সেনাসদর

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট land.gov.bd হ্যাক


খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।