তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: রাজকীয় সংবর্ধনায় সিক্ত দেশনায়ক

Seba Hot News : সেবা হট নিউজ
0

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার: অবশেষে শেষ হলো দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর। ১৭ বছরের নির্বাসন, ষড়যন্ত্র, মামলা আর অপপ্রচারের জাল ছিঁড়ে বীরের বেশে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান।

Tarique Rahman's return home: Patriot receives royal welcome
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: মায়ের কোলে ফিরলেন তারেক রহমান, রাজকীয় সংবর্ধনায় সিক্ত দেশনায়ক




আজ ২৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাঁকে বহনকারী বিমানটি ঢাকার মাটি স্পর্শ করার মধ্য দিয়ে রচিত হলো বাংলাদেশের রাজনীতির এক নতুন ইতিহাস। ‘তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ ঘিরে আজ রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে এক উৎসবের নগরীতে।

 
আজ বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তারেক রহমান, তাঁর সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান এবং একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানটির চাকা মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই রানওয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ লাখো নেতাকর্মীর ‘তারেক রহমান স্বাগত’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস।

ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে তিনি যখন ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশ করেন, তখন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্যরা অশ্রুসজল চোখে তাঁদের প্রিয় নেতাকে আলিঙ্গন করেন। এসময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু। তিনি ফুলের মালা দিয়ে পরম মমতায় জামাতাকে বরণ করে নেন। দীর্ঘ বছর পর পরিবারের সদস্যদের এই মিলন দৃশ্য উপস্থিত সবার হৃদয়ে নাড়া দেয়।

 
এর আগে বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টায় স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হন তারেক রহমান। তাঁকে বহনকারী ফ্লাইটটি আজ সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ডের জন্য যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়। সিলেটের হাজার হাজার জনতা বিমানবন্দরের বাইরে ভিড় করে তাঁদের নেতাকে একনজর দেখার জন্য। এরপর বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে পুনরায় যাত্রা শুরু করে এবং ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় এসে পৌঁছায়।

 
বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর লাল-সবুজ রঙে সজ্জিত একটি বিশেষ খোলা ছাদের বাসে আরোহণ করেন তারেক রহমান। গন্তব্য ছিল রাজধানীর পূর্বাচলগামী ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (সাবেক ৩০০ ফিট)। দলের পক্ষ থেকে সেখানে তৈরি করা হয়েছিল গণসংবর্ধনার মঞ্চ।

যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল যে, তারেক রহমানের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হলো অসুস্থ মা বেগম খালেদা জিয়ার পাশে থাকা। কিন্তু লাখো জনতার ভালোবাসা ও প্রত্যাশাকে উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আবালবৃদ্ধবনিতা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সৈনিক এবং দলীয় নেতাকর্মীদের ভালোবাসার জবাবে তিনি যাত্রাপথের মাঝখানে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য থামেন।

সেখানে সমবেত জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “এই দেশ আপনাদের, এই বিজয় আপনাদের। ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশে আমি আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি সেবক হিসেবে।”

 
আরও পড়ুন:
তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে জামালপুর থেকে ঢাকায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী
তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে জামালপুর থেকে ঢাকায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী
অবশেষে দেশের পথে তারেক রহমান: আজ তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
অবশেষে দেশের পথে তারেক রহমান: আজ তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকবে রাজধানী
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকবে রাজধানী
অবশেষে ট্রাভেল পাস হাতে পেলেন তারেক রহমান: ২৫ ডিসেম্বর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চূড়ান্ত
অবশেষে ট্রাভেল পাস হাতে পেলেন তারেক রহমান: ২৫ ডিসেম্বর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চূড়ান্ত


গণসংবর্ধনা শেষে তিনি কালবিলম্ব না করে সরাসরি রওনা হন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে। সেখানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁর মমতাময়ী মা, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর মা ও ছেলের এই সাক্ষাৎ ছিল একান্তই ব্যক্তিগত ও আবেগঘন। হাসপাতালের কেবিনে মায়ের পাশে বসে তিনি দীর্ঘক্ষণ সময় কাটান। রাজনৈতিক বর্মের আড়ালে থাকা একজন সন্তানের হাহাকার আজ পূর্ণতা পেল মায়ের স্পর্শে। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর নিজ বাসভবনে ওঠেন।

 
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামীকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন এবং সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। শনিবার তিনি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। এরপর তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শহীদ ও ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন। পরে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে জুলাই আন্দোলনে আহত ও চিকিৎসাধীন বিপ্লবীদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেবেন।

 
ইতিহাস বলে, রাজনীতিতে সময় সবকিছুর উত্তর দিয়ে দেয়। তারেক রহমানের জীবনে এই কথাটি ধ্রুব সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে। ২০০৭ সালের ১/১১-এর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৭ মার্চ তিনি গ্রেফতার হন। রিমান্ডের নামে তাঁর ওপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতনে তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, তারেক রহমানের রাজনৈতিক অধ্যায় হয়তো সেখানেই শেষ।

কিন্তু তিনি দমে যাননি। ২০০৮ থেকে ২০২৪—এই দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি প্রবাসে থেকেও দেশের রাজনীতির নাড়ি নক্ষত্র নজরে রেখেছেন। ২০০১-২০০৬ শাসনামলে তাঁর বিরুদ্ধে ‘হাওয়া ভবন’ কেন্দ্রিক যে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল, তাকে তিনি মিথ্যা প্রমাণ করেছেন তাঁর কর্ম দিয়ে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাঁকে জোরপূর্বক ‘মাস্টারমাইন্ড’ সাজিয়ে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করার যে ব্লু-প্রিন্ট আওয়ামী লীগ সরকার এঁকেছিল, তা আইনি ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করেছেন তিনি।

 
২০১৮ সালে মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হলে আট হাজার কিলোমিটার দূর থেকে বিএনপির হাল ধরেন তারেক রহমান। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি দলকে সুসংগঠিত করেন। তিনি গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেন।

ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু, মায়ের অসুস্থতা এবং নিজের ওপর হাজারো মামলার খড়গ—কোনোকিছুই তাঁকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের গুম, খুন ও নির্যাতনের মুখে তিনি নেতাকর্মীদের স্লোগান শিখিয়েছিলেন—‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে।’ তাঁর এই স্লোগানই ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মূল মন্ত্র হয়ে ওঠে।
তারেক রহমান নিজেকে কেবল দলীয় প্রধান হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং তিনি ব্যক্তি-কেন্দ্রিক রাজনীতির পরিবর্তে রাষ্ট্র ও জনগণ-কেন্দ্রিক রাজনীতির প্রবর্তন করেছেন। তিনি ৩১ দফার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছেন। আজকের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন তাই কেবল একজন ব্যক্তির ফেরা নয়, বরং একটি আদর্শের বিজয়।

 
আজকের এই দিনে তারেক রহমান যখন দেশের মাটিতে পা রাখলেন, তখন তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ১৭ বছর আগে যিনি অপবাদের বোঝা নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন, আজ তিনি ফিরলেন জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে। সাধারণ মানুষ তাঁর মাঝে খুঁজে পাচ্ছে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার জিয়াউর রহমানের ছায়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনবে। তিনি এমন এক সময়ে ফিরলেন, যখন দেশ একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে। তাঁর উপস্থিতি বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় যেমন জোয়ার আনবে, তেমনি জাতীয় রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রায়নের পথকে সুগম করবে।

 
দীর্ঘ দেড় যুগের প্রতীক্ষা শেষে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে লেখা থাকবে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান—জনতার এই ঢল প্রমাণ করে যে, অপপ্রচার ও নির্যাতন চালিয়ে কোনো নেতাকে জনবিচ্ছিন্ন করা যায় না। তারেক রহমান ফিরেছেন, সঙ্গে নিয়ে এসেছেন নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা। এখন দেখার বিষয়, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কীভাবে গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়।


সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন


জাতীয়- নিয়ে আরও পড়ুন
অবশেষে দেশের পথে তারেক রহমান: আজ তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
অবশেষে দেশের পথে তারেক রহমান: আজ তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
পদত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী
পদত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী
দিনভর নাটকীয়তা ও তালাবদল: আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাবির ৬ ডিন
দিনভর নাটকীয়তা ও তালাবদল: আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাবির ৬ ডিন
দেশে পৌঁছেছে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা
দেশে পৌঁছেছে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা
না ফেরার দেশে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি
না ফেরার দেশে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top